আজব এক নির্বাচন হয়ে গেল উত্তর কোরিয়ায়। সেখানে সংসদের এই নির্বাচনে একটিই মাত্র ব্যালট পেপার। তাতে একটি মাত্র নাম। বিরোধী দলীয় কারো নাম নেই তাতে। ভোটার ভোটকেন্দ্রে গেলে তাকে ধরিয়ে দেয়া হয় সেই ব্যালটপেপার। তাতে টিক চিহ্ন বা ছাপ দেয়ার দরকার নেই। শুধু ব্যালটবাক্সে ফেলে দিলেই হয়ে গেল ভোট দেয়া। প্রতিজন ভোটারের ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক।
দে
শটিতে ক্ষমতায় নেতা কিম জন উন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর এটি হলো সেখানে দ্বিতীয় নির্বাচন। এখানে সংসদের আনুষ্ঠানিক নাম হলো ‘সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি’ বা (এসপিএ)। এই নির্বাচনে ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কে কে প্রার্থী হবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। ফলে এতে অন্য কোনো প্রার্থী বেছে নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এখানে নেই বিরোধী দল বলে কিছু। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার শত ভাগ। সরকার যে জোট তৈরি করবে সেই জোটকেই সর্বসম্মতভাবে ভোট দিতে হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, গার্ডিয়ান সহ বিভিন্ন মিডিয়া।
এতে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। কিম পরিবার বংশপরম্পরায় শাসন করছে। শাসক পরিবার এবং ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি úূর্ণাঙ্গ আনুগত্য দেখানো প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক।
যেভাবে ভোট হয়
বিবিসি লিখেছে, সরকারের সমর্থনে উল্লাস প্রকাশ করা উত্তর কোরীয়দের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নির্বাচনের দিনে ১৭ বছর বয়সের ওপরে সব নাগরিককে ভোট দিতে যেতে হয়। আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে আপনাকে খুব ভোরে নির্বাচন কেন্দ্রে হাজির হতে হবে- এ কথা বলেছেন উত্তর কোরিয়া বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টার্টিস্কি। তিনি আরো বলেন, এর মানে হলো সবাই একসাথে হাজির হওয়ার পর ভোটকেন্দ্রে লম্বা লাইন।
এরপর ভোটার যখন ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন, তখন তার হাতে একটি ব্যালট পেপার দেয়া হবে। ব্যালট পেপারে একটাই নাম থাকবে। সেখানে কোন কিছু লিখতে হবে না। কোন বাক্সে টিক চিহ্ন থাকবে না। ভোটার শুধু ব্যালট পেপারটি নিয়ে একটি বাক্সে ভরে দেবেন। ভোটের বাক্সটিও সাধারণত খোলা অবস্থায় রাখা হয়। নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটের বুথ থাকে। কিন্তু কেউ সেখানে যায় না- বলছেন বিশ্লেষকরা। কারণ সেটা করা হলে সেই ভোটারের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
মি. টার্টিস্কি বলেছেন, আপনি চাইলে ব্যালট পেপারের নামটিও কেটে দিতে পারেন। কিন্তু সেটা করলে নিশ্চিতভাবেই সরকারের গোপন পুলিশ আপনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর শুরু করবে। এ ধরনের কাজ যারা করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাগল আখ্যা দেয়া হয়েছে। ভোট দেয়া শেষ হয়ে গেলে ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে যাবেন এবং সেখানে উপস্থিত অন্যান্য ভোটারের সাথে মিলে আনন্দ প্রকাশ করবেন, এই কারণে যে দেশের সুযোগ্য নেতাদের প্রতি সমর্থন জানাতে পেরে আপনি খুবই খুশি।
মিনইয়াং লি বলেন, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ভোটের দিনটিকে বরাবর একটি উৎসব হিসেবে দেখানো হয়। উত্তর কোরিয়ার ওপর ‘এনকে নিউজ’ নামে একটি নিউজ ওয়েবসাইটের সাংবাদিক মিনইয়াং লি।
যেহেতু ভোটদান বাধ্যতামূলক, তাই নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে কে ভোট দিতে যায় নি, কিংবা কে দেশ ছেড়ে চীনে পালিয়ে গেছে।
সংসদের হাতে তাহলে কী ক্ষমতা রয়েছে?
সুপ্রিম পিপলস্ অ্যাসেমব্লি’ (এসপিএ) মূলত ক্ষমতাহীন, রাজনীতির ভাষায় যাকে রাবার-স্ট্যাম্প সংসদ বলা হয়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর সংসদ নির্বাচন হয়। এটিই রাষ্ট্রের একমাত্র আইন প্রণয়নকারী শাখা। ফিয়োদর টার্টিস্কি বলেন, আমি জানি বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায়ই বলে: ‘এসপিএর ক্ষমতা খুবই সামান্য। কিন্তু আমি বলবো এর ক্ষমতা আসলে শূন্য।
উত্তর কোরিয়ার আইন তৈরি হয় ক্ষমতাসীন দলের হাতে আর সংসদ শুধু সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়। তত্ত্বগতভাবে সংসদের হাতে যে ধরনের ক্ষমতা থাকা উচিত তার কিছু মাত্র নেই এসপিএ-র হাতে। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেলে সে দেশের সংবিধানকে বদলে ফেলা সম্ভব। আর সংসদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কিম জং-উনকে তার ক্ষমতা থেকে অপসারণ করাও সম্ভব। তবে সমস্যা হলো এসপিএ-র অধিবেশনও খুব নিয়মিতভাবে হয় না। প্রথম অধিবেশনের ছোট একটি কমিটি গঠন করা হয়, যেটি সংসদের পক্ষ হয়ে কাজ করে।
উত্তর কোরিয়ায় কী বিরোধীদল নেই?
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন উত্তর কোরিয়ায় বিরোধীদলের কোন অস্তিত্বই নেই। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে সে দেশের সংসদে তিনটি দল রয়েছে। কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির রয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন। অন্যদিকে, সোশাল ডেমোক্রেট পার্টি আর চন্ডোইস্ট চঙ্গু পার্টির সামান্য কিছু আসন রয়েছে। তবে এই তিনটি দলের মধ্যে বিশেষ কোন তফাৎ নেই। তারা সবাই মিলে তৈরি করেছে এক জোট যেটি মূলত দেশ পরিচালনা করে। এই জোটের নাম ‘ডেমোক্রেটিক ফন্ট ফর দ্য রিইউনিফিকেশন অফ কোরিয়া।