শোবিজে পথ চলাটা শুরু করেছিলেন মডেলিং দিয়ে। মডেলিংয়েই গড়েছেন ক্যারিয়ার। নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও। বহু দেশে বহু নামি দামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশি মডেল হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও অভিজাত ম্যাগাজিন ‘ভোগ’র প্রচ্ছদকন্যা হয়েছেন তিনি।
মডেলিংয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনাতেও পেয়েছেন সাফল্য। বিপিএলের সময়টায় মাঠে দেখা যায় তাকে। নাটকেও কাজ করেছেন। দেখা গেছে তাকে সিনেমাতেও। সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছেন রায়হান রাফির নতুন চলচ্চিত্রে।
শোবিজের পাশাপাশি একজন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলছেন। বহুমাত্রিক প্রতিভায় বিকশিত এই নারী পিয়া জান্নাতুল। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে পিয়া জাগো নিউজের মুখোমুখি। জানিয়েছেন তার পথচলা, নারীদের নিয়ে নানা ভাবনার কথা।
জাগোনিউজ : আজ নারী দিবস। আপনাকে শুভেচ্ছা। আপনার কাছে নারী দিবস মানে কী?
এটা আমার কাছে স্পেশাল একটা দিন। গুরুত্ববহ একটা দিন। এই দিনটা মনে করিয়ে দেয় এই সমাজে, এই পৃথিবীতে এখনো অনেক নারীরা পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে প্রান্তিক নারীরা অনেক কিছুতেই পিছিয়ে আছে।
আবার শহরেও অনেকে এখনো সংসার, সঞ্চয় নিয়ে আটকে থাকেন। শিক্ষা নিয়ে চাকরি করছেন। কিছু আয় করছেন। সে আয় দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন না, তিনি সেটা, হয় সংসারে ব্যয় করছেন নয়তো সঞ্চয় করছেন। দেখুন, পার্থক্য কেবল আগে নারীরা মাটির ব্যাংকে জমা করতো স্বামী-সন্তানের জন্য আর এখন ব্যাংকে গিয়ে জমা করছে।
তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে পিছিয়ে থাকা নারীদের জন্য। প্রতিটি সমাজেই নারী অর্ধাংশ। তার শতভাগ উন্নতি না হলে ওই সমাজ উন্নত হবে না।
নারীকে সমাজের নিয়ন্ত্রণের অংশ হতে হবে। ব্যবসা, চাকরি, নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে। যে নারী যত বেশি অবদান রাখতে পারবেন তার অবস্থান ততো শক্ত হবে। যেমন আমি যদি মনে করি নিজেকে নায়িকা হিসেবে দেখব তাহলে নিজেই প্রযোজনা করব। যদি আমার প্রতি কারো আগ্রহী না থাকে তবে আমি কারো অপেক্ষা করব না। নিজেই নিজেকে নায়িকা হিসেবে দাঁড় করাবো। মোট কথা হলো, এভাবে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। যতদিন সব নারীরা না দাঁড়াবে, সমানভাবে সম্মানিত না হবে ততদিন নারী দিবসের গুরুত্ব থাকবে।
জাগো নিউজ : সভ্যতার পরিবর্তনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদানকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ণ করেন?
পিয়া জান্নাতুল : আমি একজন ফেমিনিস্ট। আমি মনে করি পৃথিবীর আজকের যে সভ্যতা তার পেছনে নারীর অবদান পুরুষের সমান। পুরুষকে নারীই অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে সব কাজে, সব সাফল্যে। যে সংসারে নারী সফল না, সেই সংসারে সফল পুরুষও কিন্তু থাকে না।
তবে এটাও স্বীকার করতে হবে এখনো পিছিয়ে থাকা নারীর সংখ্যা বিশাল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানসিকতা- নানাভাবেই পিছিয়ে আছে অনেক নারী। তাদের সঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে এই সভ্যতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
জাগো নিউজ : আধুনিক যুগে নারীরা দুরন্ত হয়ে এগিয়ে চলেছে। তবুও অনেক ক্ষেত্রে নারীদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন?
পিয়া জান্নাতুল : আমি মনে করি এটা মানসিকতার সমস্যা। আমাদের এখানে মানবিক মূল্যবোধ খুব, শিক্ষার প্রভাব আধুনিকতা ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে এগুয়নি। সে কারণে একজন নারীকে কাজ করতে গেলে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এখানে আমি বলবো নেতিবাচক চিন্তা ও সমালোচনাই বড় প্রতিবন্ধকতা। আমি নিজেকে দিয়েই উদাহরণ দিতে চাই। আমি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে (বিপিএল) উপস্থাপনা করি। এ নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়। কারণ আমি নারী হয়েও ছেলেদের খেলায় কেন উপস্থাপনা করব। এটা যেন বিরাট অন্যায়।
যারা সমালোচনা করেন তারা এটা বুঝেন না যে একটা ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে আমাকে ভেবেচিন্তেই নেয়া হচ্ছে। আমাকে অনেক পরীক্ষা দিয়ে, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এই কাজটা করতে হচ্ছে। আমি অবশ্য এটা নিয়ে ভাবি না। আমি কোনো সমালোচনাকে পাত্তা দেই না। নিজের কাজটা করে যাই। দুই বছর ধরে করছি, আগামীতেও করবো ইনশাআল্লাহ। নারীদেরকে এভাবেই কাজ করতে হবে।