কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। এ চলে যাওয়া তার শারীরিক প্রস্থানই কেবল। ভক্ত ও সতীর্থদের হৃদয়ে তিনি আছেন উজ্জ্বল হয়েই। ধারাবাহিক এ আয়োজনে তাকে নিয়ে একে একে স্মৃতিচারণ করেছেন সতীর্থদের কয়েকজন
একজন শাহনাজ রহমতুল্লাহর যে অসাধারণ কণ্ঠ তা যেমন কোনোভাবে কান থেকে দূরে থাকার মতো নয়, তার গান, গানের মধ্যে আবেগও দূরে রাখার মতো নয়। তিনি এমনই একজন শিল্পী যার কণ্ঠের মডিউলিশন, ব্রেথ কন্ট্রোল, থ্রোয়িং, এক্সপ্রেশন বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পীর মধ্যে নেই। তার এসব বিষয় এবং তার আদর্শকে ফলো করলেই শিল্পী হওয়া যেতে পারে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সব শিল্পীর প্রিয় শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তিনি আমাকে ছেলে বানিয়েছিলেন।আমাকে সন্তানের মতোই দেখতেন। আর তিনিও আমার কাছে মাতৃতুল্যই ছিলেন। আমার খোঁজখবর রাখতেন সবসময়। দেখা হলে তো স্নেহ-ভালোবাসা আর মায়ের মমতা অকাতরেই ঢেলে দিতেন। আর দূরে থাকলেও সেসব থেকে আমি বঞ্চিত হতাম না। ফোন করেই খবর নিতেন, আমার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে কিনা। আমি ঠিকমতো খেয়েছি কিনা, টাইমমতো ঘুমাতে যাই কিনা। আমাকে সবসময় বলতেন, প্রোগ্রাম নিয়ে বেশি চাপ না নিতে। তার এসব তিনি বলতেন এমন দরদমাখা কণ্ঠে যে, আমি মাঝে-মধ্যে লজ্জায় গুটিয়ে যেতাম। আমি যেন টেলিভিশনে রাত নয়টার পর কোনো গান না করি এ কথাটা তিনি সবসময় বলতেন। কারণ, তাহলে সেটা তিনি দেখতে পারতেন না। আর এতে উনার অনেক কষ্ট হতো। এ মানুষটি আমার গানের খুব ভক্ত ছিলেন। কিন্তু তাই বলে সমালোচনা করতে ছাড়তেন না। গানের কোথাও সামান্য ভুলত্রুটি থাকলেও নির্দিষ্ট জায়গা ধরে ধরে শুধরে দিতেন মায়ের মমতা দিয়েই।
উনার সঙ্গে আমার একটা গভীর পারিবারিক বন্ধন ছিল। একজনের বাসায় অন্যজনের যাওয়া-আসার বিষয়টি ছিল আপন আত্মীয়ের মতোই। উনার পরিবারের কোনো অনুষ্ঠান যেমন আমাদের ছাড়া হতো না তেমনই তাদের পরিবারকে বাদ দিয়ে আমাদের কোনো অনুষ্ঠানও হতো না। এই যে একজন মানুষের এত মমতা এটা শুধু আমার ব্যাপারেই না, পরিচিত ছোট-বড় সকলের জন্যই দেখতাম সবসময়। সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র যেকোনো শিল্পীই তার কাছ থেকে যে অমায়িক ব্যবহার পেত সত্যিই সেটার তুলনা হয় না। কিন্তু উনার স্বামীর কাছ থেকে শুনেছি, এ মানুষটি যেদিন চলে গেলেন সেদিন তাকে শেষবারের মতো দেখতে তার সমসাময়িক অনেক শিল্পীই যাননি। এমনকি একটা ফোন পর্যন্তও তারা কেউ করেননি। আর যারা নবীন শিল্পী তার গান গেয়েই নিজেদের স্টেজ এবং টিভি লাইভ শো চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরও কাউকে দেখিনি। এটা যে কতটা দুঃখজনক তা বলে বোঝানো যাবে না। মা শাহনাজ রহমতুল্লাহ চলে গেলেন। আর আদর, শাসন এবং দুঃখ কষ্টে মানসিক শক্তির আশ্রয়টুকু হারালাম আমি। দোয়া করি আল্লাহ্ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।