নয় দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজপথ, রেলপথ অবরোধ করেন শ্রমিকরা। স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, ধর্মঘটের পাশাপাশি প্রতিদিন চারঘণ্টা করে রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে টানা ধর্মঘট চলছে। শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে উঠেছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে। তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে।
শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করছেন।
শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার রাতে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শ্রমিক নেতারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থবরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।
পাটকল শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন জানান, শ্রমিকরা ৭ থেকে ৯ সপ্তাহের মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘর ভাড়া দিতে পারছে না।
শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার রাতে খুলনা ও যশোর অঞ্চলের সকল পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। বিজেএমসি থেকে শ্রমিকদের ৯ দফার একটি মেনে নেয়ার নির্দেশনা এলেও বাকি ৮ দফা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
এদিকে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বুধবার ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে কোনও ট্রেন ছাড়েনি। ফলে যাত্রীরা স্টেশনেই অবস্থান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। খুলনা স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে সব বয়সী যাত্রীরা অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি। সকাল ৬টার কমিউটার, সাড়ে ৬টার কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, সোয়া ৭টার রূপসা এক্সপ্রেস, ৮টা ৪০ এ চিত্রা এক্সপ্রেস, ৯টা ১০ এ রকেট ছাড়া সম্ভব হয়নি। ১২টা পর্যন্ত কোনো ট্র্র্রেনই ছাড়া সম্ভব হবে না।’
রাজশাহীতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, বকেয়া বেতন-ভাতাসহ ৯ দফা দাবিতে রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন জুল মিল শ্রমিকরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় তারা জুট মিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন এবং বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে শুয়ে পড়েন।
বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে প্রায় ২০ মিনিট ধরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দু’পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় ওই মহাসড়কে আবারো যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিক্ষুব্ধ জুট মিল শ্রমিকরা জানান, জানুয়ারি মাস থেকে তাদের বেতন ও ভাতা বন্ধ। বকেয়া বেতন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও উৎসব ভাতা দেয়াসহ ৯ দফা দাবিতে রোববার থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের টনক নড়ছে না। আন্দোলন চলমান থাকলেও কোনো আশ্বাস মিলছে না।
রাজশাহী জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, আগে ৪ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা বেতন ছিল। বর্তমানে সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৩শ’ টাকা ঘোষণা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এর ওপর গত জানুয়ারি মাস থেকে জুট মিলে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তাই বকেয়া বেতন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও উৎসব ভাতা দেয়াসহ শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আর ঘোষিত বেতন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয়া হয়েছে।
কাটাখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, মহাসড়ক থেকে বিক্ষুব্ধ জুট মিল শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।