কটি এলাকা শিক্ষাদীক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতিতে কত দূর এগোবে, তা সেখানকার বিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর বোলালেই আন্দাজ করা যায়। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষকের সংখ্যা ও তাঁদের পাঠদানের মান, পড়াশোনার পরিবেশসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদীক্ষার অগ্রগতি নির্ভর করে। শিক্ষায় এগিয়ে গেলে সার্বিক অগ্রগতি আপনা
থেকেই আসতে বাধ্য। বিষয়টি সরকার যে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে তা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমে অনেকটাই স্পষ্ট। কোনো শিশু যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিক্ষার সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। পাকা ভবনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সরকারের এত চেষ্টার মধ্যেও কিছু এলাকা এখনো দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে একটু দুর্গম ও চরাঞ্চল হলে সেখানে শিশুরা শিক্ষার পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছে না। এসব এলাকার কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ের মানসম্মত অবকাঠামো নেই। পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। টেবিল-চেয়ার নেই। শৌচাগার নেই। অনেকগুলো ‘নেই’ গোটা এলাকার শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার মানসিকতাকেই ‘নেই’ করে দিচ্ছে। তেমনই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরবেহেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থী আছে ২৩৭ জন।
তাদের পড়ানোর জন্য শিক্ষক থাকার কথা আটজন। আছেন দুজন। দুজন শিক্ষকের পক্ষে এত শিশুকে পাঠদান করা যে সম্ভব নয়, তা শিশুরাও বোঝে। এ কারণে বাধ্য হয়ে দপ্তরিকে দিয়ে তাদের পড়ানো হচ্ছে। সেখানেই চলছে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সুবাদে জানা গেল, আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি চালু হয়েছিল। এর মধ্যে দুবার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ ২০০০ সালে টিনের একটি ঘরে আবার শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম। সেই টিনের ঘরটি এখন জরাজীর্ণ। ভাঙা দরজা-জানালা নিয়ে ঘরটি হেলে পড়েছে। ঘরে তিনটি কক্ষ। দুটিতে দুজন শিক্ষক এবং বাকিটায় দপ্তরি ক্লাস নেন। একই টিনের ঘরে চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে কী পড়ানো হচ্ছে, বোঝার সুযোগ থাকে না।
দুজনের বেঞ্চে গাদাগাদি করে চারজনকে বসতে হয়। কখনো জায়গার অভাবে বাচ্চাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জরাজীর্ণ টিনের চাল ফুটো। বৃষ্টিতে পানি পড়ে। ভাঙা বেড়া দিয়ে যখন-তখন কুকুর-বিড়াল ঢুকে পড়ে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য শৌচাগার নেই।
বাংলাদেশে কতটি বিদ্যালয়ের অবস্থা চরবেহেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো, তা দ্রুত খতিয়ে দেখা দরকার। দ্রুত সেখানে মানসম্মত অবকাঠামো তোলা ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। কারণ, চরবেহেরপাড়া বিদ্যালয়ের মতো পরিবেশে আর যা-ই হোক সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম চলতে পারে না। আর সুষ্ঠু পাঠদান নিশ্চিত না করা গেলে নিশ্চিতভাবেই শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হবে। তাদের শিক্ষাবঞ্চিত রাখার অধিকার কারও নেই।