সদ্যঘোষিত ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে শতাধিক বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ায় প্রতিবাদে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে পদবঞ্চিতরা। গত শনিবার রাতে বিতর্কিত নেতাদের ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে এসে আবারও পদপ্রাপ্তদের হামলার শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিতরা। এতে পদবঞ্চিতদের মধ্যে নারী নেত্রীসহ ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন।
আহতদের অভিযোগ, হামলার সময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজে এক নারী নেত্রীকে মারধর করেন। এদিকে, হামলার ঘটনায় পদবঞ্চিতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করে অনশন কর্মসূচি পালন করছে। তারা বলছেন, বারবার তাদের উপর হামলার বিচার তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিতে চান এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস দেওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এছাড়া একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হামলার শিকার হওয়া রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশাকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ করে শাহবাগ থানায় জিডি দায়ের করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিতদের একটি তালিকা নিয়ে রাত ১২টার দিকে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আসেন পদবঞ্চিতদের ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। তারা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পদবঞ্চিতদের সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তারকে প্রশ্ন করেন ‘তুই আমার বিরুদ্ধে মাদক নেওয়ার বিষয়ে চ্যানেলগুলোতে কথা বলেছিস কেন?’
লিপি আক্তার পাল্টা বলেন, ‘আপনারা তো সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিষয়ে খারাপ কথা বলেছেন। এটা আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি।’ পরে গোলাম রাব্বানী লিপিকে বেয়াদব বলেন। গোলাম রাব্বানীর এমন মন্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে লিপি আক্তারের সঙ্গে তার তর্ক বেধে যায়।
এক পর্যায়ে গোলাম রাব্বানী নিজেই লিপি আক্তারের গায়ে হাত তোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রাব্বানীর অনুসারীরাও লিপিসহ তার সঙ্গী ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি শ্রাবণী শায়লা ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ অন্যদের ওপর হামলা চালায়। এসময় টিএসসির ভেতরে তাদের উপর কয়েকধাপে হামলা করা হয়।
হামলায় পদবঞ্চিতদের প্রায় ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা। আহতরা হলেন- নতুন কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আজমীর শেখ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন। এরমধ্যে শেখ আব্দুল্লাহের ডান ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যে পড়ে ছিলেন।
এদিকে টিএসসিতে হামলার পর রাত তিনটার দিকে পদবঞ্চিতরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে অবস্থান নেন। বিতর্কিতদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ দিতে এসে হামলার শিকার হওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ও তার কাছে বিচার চান। এসময় পদবঞ্চিতদের বুঝিয়ে অনশন থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
এসময় গোলাম রাব্বানী তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি দুঃখিত, তোমরা চলে যাও। আমি কাল নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব। কিন্তু হামলার শিকার নেতাকর্মীরা তাতে রাজি হননি।
তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পেলে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এ অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনীসহ তাদের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে পদবঞ্চিতদের নেতৃত্বে থাকা গত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, আমরা যে ৯৯ জনের নামের তালিকা দিতে সভাপতি-সম্পাদক বরাবর আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনী আমাদের বোন ও রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তারকে মারধর করে। এরপরই তার অনুসারীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।
ডাকসু এবং ছাত্রলীগের গত কমিটির সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিতর্কিতদের ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেখানেও আমরা হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হই। এর প্রতিবাদে আজকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এসময় তিনি মধুর ক্যান্টিন ও টিএসটিতে হামলার তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার এবং ছাত্রলীগের কমিটিতে যে বিতর্কিত লোকজন রয়েছে তাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং কমিটি পুনর্গঠন করার দাবি করেন।
নিজের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমরা ১২ জন লাঞ্ছিত হয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। গোলাম রাব্বনী যে তাকে মারধর করেছিল সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।
অভিযোগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কমিটিকে কেন্দ্র করে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। কারও গায়ে হাত তোলা হয়নি। সিন্ডিকেটের নির্দেশে নাটক সাজিয়ে তারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। হামলার ঘটনাকে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিতদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমি আর শোভন শুধু তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি।