জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্যই তাঁকে ফোন দেওয়া। বললেন, ‘জন্মদিন শুনলেই তো মনে জীবনের সীমা–পরিসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। জীবন থেকে আরেকটা বছর হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এবারের জন্মদিনটা তাঁর কাছে অন্য রকম। কারণ একটাই, একমাত্র ছেলের শুভেচ্ছা। কেক কাটা। খুব ইমোশনাল হয়ে গেলাম।’ বললেন কুমার বিশ্বজিৎ। আজ বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর জন্মদিন।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এ যুগের বাচ্চারা তো যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অনুভূতি প্রকাশের ব্যাপারটা কমে গেছে। কিন্তু নিবিড় ব্যতিক্রম। টাকা জমিয়ে আমাকে না জানিয়ে কেক এনে কাটার জন্য আয়োজন করল। মনে হলো আজ যেন শৈশবে ব্যাক করেছি। আর আমাদের বাচ্চারা বাপ হয়ে যাচ্ছে।’
বাবার মুখে ছেলে কেক তুলে দিচ্ছে, এ ছবিটি আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। সেখানেও তিনি তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির কথা জানিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বললেন, ‘আমার গানের শ্রোতা আর ভক্তের ভালোবাসাকেই জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করি। শ্রোতাদের ভালোবাসার জন্য আমি আজ কুমার বিশ্বজিৎ হতে পেরেছি। এই দিনে আমি কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা জানাই আমার ভক্ত, শ্রোতা আর বন্ধুদের।’
১৯৬২ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন কুমার বিশ্বজিৎ। তাঁর শৈশব কেটেছে চট্টগ্রাম জেলায়। সংগীতে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭৭ সালে রেডিওতে একটি শোর মাধ্যমে। ১৯৭৭ সালেই ‘রিদম’ ব্যান্ডের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি নিজেই একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। ১৯৮২ সালে বিটিভিতে ‘শিউলিমালা’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। আবদুল্লাহ আল মামুনের লেখা এবং নকিব খানের সুরে ‘তোরে পুতুলের মতো করে’ গানটি গেয়ে শ্রোতার কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান কুমার বিশ্বজিৎ। এই গানটি ছিল তাঁর সংগীতজীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এ ছাড়া কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা এবং লাকী আখান্দের সুরে ‘যেখানেই সীমান্ত তোমার’ গানটিও কুমার বিশ্বজিৎকে সংগীতজগতে ভালো অবস্থানে নিয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে আলাউদ্দিন আলীর সুর ও সংগীতে ‘আমরা দুজন দুটি শান্ত ছেলে’ গানে প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর অসংখ্য আধুনিক গান এবং চলচ্চিত্রের গান গেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সংগীতশিল্পীর পাশাপাশি সুরকার হিসেবেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের আরও অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কুমার বিশ্বজিতের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী নাঈমা সুলতানা এবং একমাত্র ছেলে কুমার নিবিড়।
তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানে বসন্ত আমার’, ‘জন্মিলে মরিতে হবে’, ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’, ‘তোমরা একতারা বাজাইও না’, ‘যারে ঘর দিলা সংসার দিলা রে’, ‘একটা চাঁদ ছাড়া সারা রাত’ ইত্যাদি।
এখন মঞ্চে গান করে বেশি সময় কাটছে কুমার বিশ্বজিতের। এবার ঈদ উপলক্ষে গান ছবি এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হচ্ছে কুমার বিশ্বজিতের ‘রস কইয়া বিষ খাওয়াইলো’ শিরোনামের একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন জবান আলী শাহ। এরই মধ্যে গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ভিডিও নির্মাণ করেছেন চন্দন রায় চৌধুরী।
নতুন গান প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এর আগেও জবান আলী শাহর গান করেছি। সেটি শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে এবার “রস কইয়া বিষ খাওয়াইলো” গানটি সাড়া ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।’