আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় অংকের ঘাটতি থাকায় দেশে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে বিপুল পরিমাণের মার্কিন ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার মান ধরে রাখতে চলতি অর্থবছরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিপুল পরিমাণের ডলার বাজারে ছাড়ার পরও টাকার মান কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বিপুল পরিমাণের এ ঘাটতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অংকের অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টাকার মান ধরে রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত ২২৬ কোটি ৫০ ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে গত ২০ মে মাসের প্রথম ২০ দিনেই ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ছাড়া পরও চলতি অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হয়েছে। টাকা যাতে আরও মান না হারায় সে জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দীর্ঘসময়ের জন্য ধরে না রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এক সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা ডলার ব্যাংকগুলো ৩০ দিনের বেশি ধরে রাখতে পারবে না।
বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি অর্থবছরে সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার সরবরাহের পরও চলতি অর্থবছরে টাকার মান শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এক ডলারের মূল্য ছিল ৮৩ দশমিক ৭৫ টাকা। আর চলতি বছরের ২৯ মে এক ডলারের মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৫ টাকায়। তবে কার্ব মার্কেটে ডলারের মূল্য ৮৫ টাকার বেশি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব কোম্পানি বিদেশি ঋণ নিয়েছে, কিন্তু তাদের রপ্তানি বা বৈদেশিক মুদ্রায় আয় নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পরিশোধের জন্য বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার সংকটের কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আবার অনেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অধিক মুনাফার আশায় দীর্ঘদিন ডলার ধরে রাখার অভিযোগও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংকে ডলার সরবরাহ করেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সে সব ডলার ৩০ দিনের বেশি ধরে রাখতে পারবে না।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান ধরে রাখলেও বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর অধিকাংশই স্থানীয় মুদ্রার মান কমিয়েছে বা অবমূল্যায়ন করেছে। তবে বাংলাদেশ এখনো বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। গত সাত বছরে ভারত ও পাকিস্তান তাদের নিজস্ব মুদ্রার ৫০ শতাংশের বেশি অবমূল্যায়ন করেছে। বিদেশিদের ধারণা বাংলাদেশও তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে বাধ্য হবে। আর স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলেই পুঁজিবাজারে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।