লর্ডসের বিখ্যাত ব্যালকনিতে মাশরাফি। লর্ডসে এসে বেশির ভাগ সাংবাদিক কিংবা ক্রিকেটার কাজের ফাঁকে একটা ছবি তুলে রাখলেন। ক্রিকেটাররা তো আর সাংবাদিকদের মতো মাঠে নানা ভঙিমায় পোজ দিয়ে ছবি তুলতে পারেন না; অনুশীলন শেষে তাঁরা পরিচিত আলোকচিত্রীদের জানিয়ে রাখলেন তোলা ছবি যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লর্ডস বলে কথা! এ শহর–ও শহর, এ ভেন্যু–ও ভেন্যু ঘুরে বাংলাদেশ নোঙর ফেলেছে লর্ডসে। বাংলাদেশ যে সাত ভেন্যুতে খেলেছে, প্রতিটি মাঠের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, আভিজাত্য, সুযোগ–সুবিধার প্রেক্ষাপটে যদি প্রশ্ন করা হয়—কোনটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া কঠিন। একটি যে আরেকটির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! কিন্তু লর্ডস আসার পর এ নিয়ে আর সংশয় থাকাই উচিত নয়। লর্ডস কেন ক্রিকেটের তীর্থ—আজ যাঁরা প্রথমবারের মতো এ মাঠে পা রাখলেন, প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেছেন।
লর্ডসের আভিজাত্য, ইতিহাস, সৌন্দর্যে ডুবে থাকার পরও যে প্রশ্নটা বারবার ভেসে উঠল—আচ্ছা, মাশরাফি বিন মর্তুজা কোথায়? আলোকিচত্রীরা তাঁদের শক্তিশালী লেন্স ব্যবহার করে অধিনায়ককে খুঁজছেন। প্রতিবেদকেরা খুঁজছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে। খেলোয়াড়েরা ফিল্ডিং অনুশীলন করলেন, ব্যাটিং অনুশীলন করলেন, বোলিংয়ে ঝালিয়ে নিলেন যাঁর যাঁর মতো। কিন্তুকে মাশরাফিকে কোথাও দেখা গেল না। দেখা গেলই যখন, চকিতের মতো দেখা দিয়ে মাশরাফি আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন সবার একটাই প্রশ্ন—মাশরাফি কোথায়?
সবাই ধরে নিয়েছিল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক আসবেন। অবাক করে দিয়ে এলেন কোচ স্টিভ রোডস। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রতিটি ম্যাচের আগেই মাশরাফি এসেছেন। আজ কেন এলেন না? গত কদিনে তাঁর অবসর নিয়ে এত কথা হয়েছে, পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, গুঞ্জন তাই ডালপালা মেলেছে—লর্ডসে কাল ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলতেই কি নামছেন মাশরাফি?
টিম বাসে ওঠার আগে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হলো মাশরাফির। যে ক্রিকেটার কখনো সংবাদ সম্মেলন কিংবা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান না, বরং পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে, হাসি–রসিকতা না করলে যাঁর ‘পেটের ভাত হজম’ হয় না, তিনিই কি না সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে চাইছেন? ‘কেন সংবাদ সম্মেলনে আজ কেউ যায়নি?’ মাশরাফির পাল্টা প্রশ্ন। স্টিভ রোডস সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন জেনে একটু অবাক হওয়ার ভঙি করলেন। চারদিকে যে শেষ ম্যাচ বলে গুঞ্জন, সেটির কী বলবেন? ‘লোকে অনেক কথাই বলে। সব কথা কানে দিতে হয় না!’—বলেই মাশরাফি যখন টিম বাসের দিকে হাঁটা দেবেন, দৌড়ে এলেন রোডস।
গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা? না, স্টিভ রোডস ভীষণ আগ্রহ নিয়ে মাশরাফির সঙ্গে বিসিবির আলোকচিত্রীকে দিয়ে একটি ছবি তুলিয়ে রাখলেন। হতে পারে লর্ডসে আর কখনো দুজনের আসা হবে না, হতে পারে কালকের ম্যাচের পর আর কখনো বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে থাকা হবে না, হতে পারে….—এমন কত প্রশ্ন নিয়ে কাল লর্ডসে মাশরাফি খেলতে নামবেন লাল–সবুজ জার্সিতে।