বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাই সংবাদ সম্মেলনে তার জন্য বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংবাদ মাধ্যমের অপেক্ষা। অনেক প্রশ্ন জমা সবার মনে! বিশেষ করে বড় মঞ্চ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন কিনা সেটি জানতেই বেশি আগ্রহ সবার। কিন্তু তিনি এলেন না। প্রধান কোচ স্টিভ রোডস এসে জানালেন পাকিস্তানের বিপক্ষে মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে কতটা ব্যকুল তারা। যদিও এরই মধ্যে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ দল। তারপরও এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার কোনো কমতি নেই। এ ম্যাচ শেষেই দেশের পথ ধরবে টাইগাররা।
তার আগে আরো একটি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে পারে। ফিরিয়ে আনতে পারে সেই ১৯৯৯ এর স্মৃতি। যা ক্রিকেট দুনিয়াতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল টাইগারদের। এবার ক্রিকেটের তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত লর্ডসে সেই দিন ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামবে মাশরাফির দল। গতকাল কোচ স্টিভ রোডস বলেন, ‘দারুণ অনুশীলন হয়েছে। ড্রেসিং রুমে সবাই আত্মপ্রত্যয়ী এই ম্যাচ জয়ের জন্য। আমরা জানি টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছি। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেই দেশে ফিরে যেতে চাই।’
তবে খেলার চেয়ে যেন সব আগ্রহ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফিকে ঘিরে। তার বিদায়ের ম্যাচে ড্রেসিং রুমে নিশ্চয় থাকবে আবেগ। কতটা প্রভাব পড়তে পারে সেই আবেগ। কোচ জানিয়ে দিলেন, ‘অবশ্যই মাশরাফির জন্য সবার অনেক শ্রদ্ধা। তবে এর প্রভাব আশা করি ড্রেসিংরুমে পড়বে না।’ তবে এই ম্যাচের আগে টাইগার অধিনায়ক বেশ ভেঙে পড়েছেন বলেই মনে হয়। বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে আসার আগে তার চোখেমুখে ছিল ষ্পষ্ট বিষন্নতা। তিনি বলেছেন, ‘টুর্নামেন্ট জুড়ে আমরা ভালো খেলেছি। তবে ছোট ছোট কিছু জিনিস ঠিক করতে পারিনি বলে ছিটকে পড়েছি। হতাশাটা সেখানেই যে আমাদের হাতে যা ছিল, সবটুকু আমরা করতে পারিনি। গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যেমন, তেমনি আগে হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতেও কিছু বিষয় একটু এদিক-সেদিক হলে, কয়েকটি মুহূর্ত নিজেদের পক্ষে নিতে পারলে আমরা জিততাম। হয়তো আজ সেমিতে থাকতাম। টুর্নামেন্টের নিয়মে তবু আরেকটি ম্যাচ খেলতে হবে। পঞ্চম স্থানে থেকে শেষ করতে পারলে সেটা কত বড় প্রাপ্তি হবে জানি না। তবে প্রতিটি ম্যাচ আমরা জয়ের জন্য নামি, এই ম্যাচেও সেটি চাইবো। হ্যাঁ, এই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশ পঞ্চম হওয়ার সান্ত্বনাই পাবে।’ সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের আসরে তিনটি জয়ে আটকে থাকার বাঁধা টপকাবে টাইগাররা। এসব চিন্তা করেই জয় দিয়ে শেষ করার তাড়না স্টিভ রোডসের কণ্ঠেও। তবে জানেন বাস্তবতা। তিনি বলেন, শুক্রবার পাকিস্তানের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি আমি। এশিয়া কাপে আমরা ওদেরকে হারিয়েছি। ওরা অবশ্যই চাইবে এবার অন্যরকম কিছু করতে। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে আমরা দেখিয়েছি, আমাদেরকে হারানো সহজ হবে না।’
আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবে সকলেই। কারণ বাংলাদেশের কাছে হারলেই পাকিস্তানের বিদায়। তবে জিতলে কিছুটা সম্ভাবনা থাকবে। অবশ্য তার জন্য অংকের হিসেবেই পাকিস্তানকে খেলতে হবে। ৯ ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের ১১ পয়েন্ট, নেট রান রেট ০.১৭৫। অন্যদিকে ৮ ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের ৯ পয়েন্ট আর নেট রান রেট ০.৭৯২। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলে শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে দুই দলের পয়েন্ট ও জয় হবে সমান সমান। তাই মিমাংসা হবে রান রেটেই। তার জন্য পাকিস্তান যদি আগে ব্যাট করে ৩৫০ রান তোলে, তাহলে ৩১১ রানে জিততে হবে। আর তারা যদি ৪০০ রান তোলে, তাহলে জিততে হবে ৩১৬ রানে। আর যদি পাকিস্তান আগে বল করে তাহলে তাদের কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। তাই টাইগারদের কোচ আত্মবিশ্বাসী এমন হিসেবে বাংলাদেশ নয় সব চাপ থাকবে পাকিস্তানের উপরই। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো চাপ নেই। এখনো যেহেতু পাকিস্তানের সম্ভাবনা আছে তার মানে চাপ থাকবে তাদের উপরই।’
কেমন হবে বাংলাদেশ দলের শেষ একাদশ? লর্ডসে দারুণ স্মৃতির মালিক তামিম ইকবাল আজও ওপেন করতে নামবেন। সঙ্গী হবেন সৌম্য সরকার। সাকিবতো আছেন, সেই সঙ্গে তার সামনে অনেক রেকর্ডের হাতছানি। লিটন খেলবেন, তবে সমস্যা মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে। গতকাল অনুশীলনে নেট বোলারের করা বল এসে আঘাত লাগে তার হাতে। ব্যথা আছে, ধারণা করা হচ্ছে হয়তো তার খেলা হবেনা। তবে ফিরতে পারেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যদি মুশফিক না খেলেন, তাহলে মিঠুনের জন্য সুযোগ থাকবে। মাহমুদুল্লাহ ফিরলে হয়তো সাব্বির থাকবেনা। মাশরাফির পায়ে ব্যথা আছে, শেষ ম্যাচ খেলবেন বলার অপেক্ষা রাখেনা। মোস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন তাকে সঙ্গ দিবেন। তবে রুবেলের পরিবর্তে মিরাজ ফিরতে পারেন একাদশে। যদিও কম্বিনেশ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কোচ।