অকল্পনীয়। এ যেন রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। ভাবা যায়! এক বিশ্বকাপ। এক ফাইনাল। লড়াইয়ে দুই দল। ইংল্যান্ড- নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংস দেখে যে কেউ অকপটে বলেই ফেললেন নিরুত্তাপ ফাইনাল। কারণটা কিউইদের স্কোর।
কিন্তু লর্ডসে ২৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে যেন দেখা গেলো লঙ্কাকা-। বোলিংয়ে দুর্দান্ত নিউজিল্যান্ড। এক চুলও ছাড় দেবে না। শেষ পর্যন্ত দেয়নি। বৃটিশ ক্রিকেটারদের শেষ বল পর্যন্ত খেলিয়ে সব উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ পরিণত করলো টাই-এ।
এ যাত্রায় ফলাফল শূন্য। নিয়ম অনুযায়ী এলো সুপার ওভারের। ইংল্যান্ড খেলবে ৬ বল। নিউজিল্যান্ড ৬ বল। এক ওভারে কিউইদের জন্য ইংল্যান্ডের টার্গেট ১৬। টানটান উত্তেজনা। পারবে তো আগের ইনিংসে ধুকে ধুকে ২৪১ রান করা কিউইরা। এখানেই ক্রিকেটের জয়। এখানেই অতীতের সব রেকর্ড ভাঙার গল্প। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর জন্ম নেয়নি। ক্রিকেটের জন্মদাতাদের বেঁধে দেয়া ১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামেন কিউই ব্যাটসম্যান গাপটিল ও নিশাম। যেন শ্বাসরুদ্ধার পরিস্থিতি। দেখে যে কারো হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার অবস্থা। ১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তড়িৎ ১১ রান পূর্ণ করলেন গাপটিল নিশাম। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ৩ রান। তাও নিয়ে নিলেন দুই কিউই ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসিটা হাসলেন বৃটিশরা। ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে জন্ম হলো আরেক ইতিহাস। সুপার ওভারেও হলো টাই। কিন্তু ফল পক্ষ নিলো বৃটিশদের। ইংল্যান্ডের ব্যাট থেকে ছয় বলে বাউন্ডারির সংখ্যা বেশি হওয়ায় চ্যাম্পিয়নের তকমা লেগে গেলো তাদের পাশে। মরগানের হাতেই উঠলো আইসিসি বিশ্বকাপ টুনার্মেন্টের ১২তম আসরের ট্রফি। যার জন্য এই মরগানদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৭টি বছর। ১৯৯২ সালে সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল খেলার পর এটিই প্রথম। তাও গতবারের রানার্সআপ কিউইদের সঙ্গে। তবে চ্যাম্পিয়নের তকমা থেকে এবারো বঞ্চিত হতে হলো কেন উইলিয়ামসনদের। শিরোপা অধরাই রয়ে গেল তাদের। তবে ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন, এই জয় ইংল্যান্ডের নয়। এটি ক্রিকেটের। জয় হয়েছে ক্রিকেটের। তারপরও ২৩ বছর পর নতুন কোনো দলের হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা উঠলো। এও যেন অন্যরকম এক রেকর্ড। অভিনন্দন ইংল্যান্ড।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে ২৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে কিউই পেসে শুরুতে বেশ নাকাল হয় ইংলিশরা। তবে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে সমালে উঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ইংলিশ শিবিরে স্বস্তি আনেন বেন স্টোকস ও জস বাটলারের জুটি। তবে এরপর ফের বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা। হারিয়ে ফেলেন দ্রুত ২ উইকেট। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এসে ইংল্যান্ড হারায় সবকটি উইকেট। তবে রান সংখ্যা সমান করে নিউজিল্যান্ডের।
পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে আসে ৩৯ রান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ফেরেন ১৭ রান করে। তাকে সাজঘরের পথ দেখান ম্যাট হেনরি। রয়ের বিদায়ের পর চাপ আরো বেড়েই যায় ইংল্যান্ডের। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে টিকে থাকার পর রুট ও বেয়ারস্টোও পথ ধরেন সাজঘরের দিকে। রুটকে (৭) গ্র্যান্ডহোম ও বেয়ারস্টোকে (৩৬) ফেরান ফার্গুসন। দলীয় অধিনায়ক এউইন মরগানও ফেরেন বড় স্কোর না করে। ব্যক্তিগত ৯ রানে দৃর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নেন লোকি ফার্গুসন। উইকেটটি পান জিমি নিশাম। বাটলার ফেরেন ৫৯ রানে। আর ক্রিস ওকস ফেরেন ২ রানে। লোকি ফার্গুসন ২ উইকেট নিয়ে খেলা জমিয়ে তোলেন।
এর আগে, প্রথম ইনিংসে ব্ল্যাক ক্যাপসদের কেউই প্রতিক্ষীত ফাইনালে বড় কোনো জুটি গড়তে সক্ষম হননি। পুরো বিশ্বকাপে দাপিয়ে বেড়ানো অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসও আজ জ্বলে উড়তে পারেননি।
বিশ্বকাপের চূড়ান্ত লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বেশ চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ইংলিশ বোলার আর্চার-ওকসদের পেস অ্যাটাকের মুখে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি কেন উইলিয়ামসের দল। শুরুতেই দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান গাপটিলের উইকেটটি খোয়ান তারা। কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন (৩০) ও নিকোলসের (৫৫) দায়িত্বশীল ব্যাটিং গাপটিলের বিদায়ে সৃষ্ট চাপ থেকে বের করে আনে নিউজিল্যান্ডকে। তবে ইংলিশ বোলার প্লাঙ্কেটের দুর্দান্ত বোলিং তোপে দুজনই দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশরা কিউইদের বেশ চেপে ধরেন। তবে রস টেলর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর ১৯ রান করা লিয়াম প্লাঙ্কেটের শিকার হন জিমি নিশাম। ফাইনালে কিউইদের আরেক সান্ত¦না লাথাম। তার সংগ্রহ ৪৭ রান। এছাড়া দলের জন্য অবদান রাখার মতো কোনো ব্যাটসম্যান উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি।
শেষ তিন ম্যাচের মতো আজও ইংলিশ বোলাররা ছিলেন দারুণ উজ্জ্বীবিত। ব্ল্যাকক্যাপসদের আটটি উইকেটের পতন করেন তারা। তাছাড়া বড় স্কোর গড়তে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ক্রিস ওকস-প্লাঙ্কেটরা। ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান প্লাঙ্কেট। ক্রিস ওকসও সমান উইকেট নিয়ে স্বল্প রানের মধ্যে কিউইদের বেঁধে রাখেন। এছাড়া ইংলিশ বোলারদের মধ্যে আর্চার ও মার্ক উড ১টি করে উইকেট শিকার করেন।