ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের প্রায় ২২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিত ছুটি চলছে। বানভাসি মানুষ গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন। ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, গাইবান্ধা, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, জামালপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, রংপুর, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম-মেঘালয় অংশে মাঝারি থেকে ভারি, কোথাও কোথাও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যমতে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সকল পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
যমুনা নদীর জামালপুর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ দশমিক ৮৪ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর প্রভাবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদী বন্যা হতে পারে। এছাড়া, সিলেট-সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং নেত্রকোনা অঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, খোয়াই ও কংস নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এদিকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, উজানের পানির তোড়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে গেছে। এতে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নদী সংলগ্ন এলাকা ও চার জেলার চরাঞ্চলসহ অন্তত ৯০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকায় গবাদি পশু ও মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। রৌমারীতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিলমারীতে ৬৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে তিন দিন ধরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি। ডুবতে শুরু করেছে এসব অঞ্চলের বাড়ি-ঘর। ওদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলার ৮০টি গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের শাল্লা, দোয়ারাবাজার, ছাতক, ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের ৬২১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে দুই কোটি ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সুরমা নদী উপচে পানি সিলেট নগরীতেও প্রবেশ করেছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, ওসমানীনগরে বন্যার পানিতে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভোলার লালমোহনের মেঘনা পাড়ের পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, বান্দরবানের লামায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে, পাহাড় ধসে নিহত ১ হয়েছে, ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কসবায় ভারী বর্ষণে চারদিন ধরে রেল স্টেশন কার্যালয় পানির নিচে রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ। জামালপুরে বন্যায় চার উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত।