স্যাটেলাইটের ছবিতে আবারো রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে। এতে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমার দৃশ্যত এখনও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে প্রস্তুত নয়। এখনও তাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেয়ার কাজ অব্যাহত আছে। অস্ট্রেলিয়ার থিংকট্যাংক অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউট (এএসপিআই) এমন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বুধবার। এ খবর উদ্ধৃত করে লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ানে লিখেছেন পত্রিকাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি হান্নাহ ইলিস-পিটারসেন।
এতে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটে পাওয়া নতুন এসব ছবি বিশ্লেষণ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মানবিকতার ভিত্তিতে ফেরত নেয়ার জন্য যে আয়োজনের কথা বলছে মিয়ানমার, তা নিয়ে আরো সংশয় দেখা দিয়েছে। এএসপিআই তার রিপোর্টে বলেছে, মিয়ানমার সরকার বারবার দেশ ছেড়ে আসা কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার যে নিশ্চয়তা দিয়েছে সেক্ষেত্রে তাদেরকে ফেরত নেয়ার প্রস্তুতি তাদের যৎসামান্য। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার মতো ব্যাপক প্রস্তুতির কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।
এএসপিআই বলেছে, তারা স্যাটেলাইটের ওইসব ছবি বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, এ বছরও রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন করে রোহিঙ্গাদের কমপক্ষে ৫৮টি বসতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে দেখতে পেয়েছে এর গবেষকরা। এ ছাড়া এ বছর রোহিঙ্গাদের অন্য গ্রামগুলোতেও ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করতে চাইছে যে, রোহিঙ্গারা ফিরে এসে বসবাসের মতো কোনো গ্রাম থাকবে না। এএসপিআইয়ের রিপোর্টের অন্যতম লেখক নাথান রুসার বলেন, ২০১৭ সালের অগ্নিসংযোগের পর এখনও সেখানে ব্যাপক আকারে সেই ভয়াবহতা অব্যাহত রয়েছে। এটা আমাকে সবচেয়ে বেশি হতবাক করেছে। সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় গিয়েছে এবং প্রতিটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। এভাবেই রোহিঙ্গাদের আবাসিক এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সরকার যে শরণার্থী প্রত্যাবর্তন করার ক্ষেত্রে সদিচ্ছা রাখে, এই ধ্বংসলীলা সেই বার্তাকে ম্লান করে দেয়।
ওদিকে সহিংসতার সময়ে রোহিঙ্গাদের কমপক্ষে ৩২০টি বসতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। তা পুনর্গঠনের কোনো চিহ্নই নেই, যদিও বলা হয়েছে- ফেরত আসা শরণার্থীরা তাদের আদি গ্রামে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু ডাটা ও স্যাটেলাইটের ছবি তা বলে না। এএসপিআই বলেছে, পক্ষান্তরে আমরা দেখতে পেয়েছি বসতি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এমন সব ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে যা কড়া প্রহরায় রাখা হবে। নির্মাণ করা হচ্ছে সামরিক ঘাঁটি। এসব ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বসতিকে ঘেরাও করে রাখা হবে নিরাপত্তার নামে।