গত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এবার যেন সেটা মাত্রা ছাড়িয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের প্রায় সব জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্কে আছে মানুষ। এখন পর্যন্ত এই রোগে অনেকে মারাও গেছেন।
সবমিলিয়ে ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হলেও উল্টো অবস্থানে আছে কলকাতা। তারা গত কয়েকবছর ধরেই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। কলকাতা কর্পোরেশন বলছে, তারা সারা বছর নিবিড় নজরদারি চালায় যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। খবর বিবিসি বাংলার।
এজন্য অনেক কর্মী আছে শহর কর্তৃপক্ষের। এর পাশাপাশি এবার এ কাজে ব্যবহার করা হবে ড্রোনও। অন্যদিকে শহরের প্রতিটা হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা পরীক্ষাগারে রোগীদের কী কী রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, কী ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রতিদিনের হিসাব রাখা হয় যাতে ডেঙ্গু রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়।
তবে একটা সময় ছিল যখন বর্ষা শুরু হলে কলকাতা কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে নামতো। কিন্তু ততদিনে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ত শহরের নানা অঞ্চলে। এ কারণে গত বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা কর্পোরেশন সারা বছরই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে শুরু করেছে।
কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলছিলেন, তারা কয়েকটা স্তরে বছরজুড়ে নজরদারি চালান। তিনি বলেন, প্রথমত, ১৪৪ টা ওয়ার্ডের প্রতিটাতেই আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন করে কর্মী আছেন যাদের মধ্যে একদল প্রচারের কাজ চালায়, আর অন্য দল কোথাও পানি জমছে কিনা সেটার ওপর নজর রাখে।
তিনি আরও বলেন, এর ওপরে আছে ১৬টি ব্যুরোর প্রত্যেকটার জন্য একটা করে র্যাপিড অ্যাকশন টিম। তাতে ৮ থেকে ১০ জন লোক থাকে সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে, গাড়িও থাকে তাদের কাছে। কোনও জায়গায় ডেঙ্গুর খবর পাওয়া গেলে দ্রুততার সঙ্গে সেখানে পৌঁছে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
নজরদারি চললেও এখনও অনেক বহুতল বা সরকারি ভবনের আনাচে কানাচে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখছে কর্পোরেশনের নজরদারি কর্মীরা, সেই ভবনগুলোকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার জন্য আইন পরিবর্তন করা হয়েছে।
আবার পানি পরিষ্কার করে দেওয়ার খরচ বাবদ বিল, বাড়ির বার্ষিক করের বিলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছে কর্পোরেশন। নজরদারি আরও ভালো করে চালানোর জন্য এবার আকাশে ড্রোন ওড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে যা থেকে মশা মারার তেলও ছড়ানো যাবে।
বাংলাদেশের নানা জায়গায় যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সেকথা অতীন ঘোষ সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের কাছে একটা চিন্তার কারণ। বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ কলকাতায় আসেন। তাদের মধ্যে কেউ যদি ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়ে আসেন তা থেকে এখানেও রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই বাংলাদেশ চাইলে আমরা যেকোনও ভাবে সহায়তা করতে রাজী।
অতীন ঘোষ আরও বলেন, ওখানকার কোনও পৌরসভা যদি আমাদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে আমরা তাদের গিয়ে হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়ে আসতে পারি কিভাবে বছরজুড়ে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজটা করি।