এ ভূমের মানুষ উৎসব ভালোবাসেন। দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলে ছুটে যান প্রিয়জনের কাছে। মাতেন আনন্দে। কাল বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের এক মহান আয়োজন। এ উৎসবকে সামনে রেখে শহরের মানুষ যথারীতি ছুটছেন গ্রামের দিকে। যেমনটা হয়ে থাকে সাধারণত তেমন ভোগান্তিও আছে।
তবে এবার গ্রামে মানুষ যাচ্ছেন তুলনামূলক কম।
এমনিতে কিছুদিন আগে দেশের একটি বড় অংশ জুড়ে বন্যা হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। তারপর ডেঙ্গু দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ। এতো শুধু ভর্তি হওয়া রোগীর হিসাব। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। মারাও যাচ্ছেন অনেকে। গতকালও ঢাকায় দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই লম্বা লাইন। রক্ত পরীক্ষা করছেন উদ্বিগ্ন মানুষেরা। এ নগরীতে উদ্বেগে নেই এমন মানুষ বলতে গেলে নেই-ই। যদিও কোনা কোনো ক্ষমতাবান মানুষেরা এ ডেঙ্গু নিয়েও কিছু রসিকতা করছেন।
ঈদকে সামনে রেখে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আরো বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ যেন ঈদে বাড়িতে না যান সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে ডেঙ্গুর আরো বিস্তার হতে পারে। তবে যাদের জ্বর নেই এবং ডেঙ্গু হয়ে ভালো হয়ে গেছে তাদের বাড়িতে গেলে কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিকে, বিপুলসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে শহর ছাড়ার ফলে শহরে এডিস মশার বিস্তার আরো বাড়তে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে। কারণ এডিস মশা সাধারণত ফুলের টবের পরিষ্কার পানি, এসি ও ফ্রিজের পানিতে জন্মায়। এখন মানুষ যতটা পারা যায় সতর্ক হয়েছেন। নিয়মিত এসব পরিষ্কার রাখছেন। লোকজনের অনুপস্থিতি যে কারণে উদ্বেগের কারণ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডেঙ্গু আর বন্যা এই দুইয়ে মিলে এবার ঈদ উৎসবে কিছুটা ভাটার টান তৈরি করেছে এরইমধ্যে। যারা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন তাদের দুঃখের সঙ্গে তো কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। এসব পরিবারে ঈদ আনন্দ আসবে না। এর বাইরেও যারা আক্রান্ত হয়েছেন, যারা আতঙ্কগ্রস্ত তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ঈদের আনন্দ সেভাবে ধরা দিবে না। বিপুলসংখ্যক বাড়তি রোগীর কারণে হাসপাতালগুলোও রয়েছে ব্যাপক চাপে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন চিকিৎসকও মারা গেছেন। তবুও চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই চাপ সামলানোর। এবারের ঈদে বেশিরভাগ চিকিৎসক, নার্স ছুটি পাবেন না। একজন ব্যক্তির রোগাক্রান্ত হওয়া পুরো পরিবারেরই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা উল্টে দেয়। ঈদের দিনও বহু পরিবারকে কাটাতে হবে হাসপাতালে। বাংলাদেশে আগে কোনো ঈদের সময় এতো মানুষ হাসপাতালে ছিল কি-না বলা মুশকিল। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু আবার কবে স্বাভাবিক হবে সে প্রশ্নই এখন দিনকে দিন বড় হচ্ছে।