মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের পর ছয় দিনে প্রায় দুই হাজার অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ফের বিক্ষোভ ঠেকাতে এসব গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইজিপসিয়ান সেন্টার ফর ইকোনমিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস এ তথ্য জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে লস অ্যানজেলেস টাইমস।
খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে কায়রোর বিখ্যাত তাহরির স্কয়ারে সিসির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে শত শত মানুষ। আকারে ছোট ও বিচ্ছিন্ন থাকলেও কয়েক দশক ধরে সিসির একচ্ছত্র শাসনের বিরুদ্ধে এটাই ছিল উল্লেখযোগ্য প্রথম বিক্ষোভ। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে কার্যত বিক্ষোভ দমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন সিসি। তাই বিক্ষোভের পরপরই তার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আজ শুক্রবার ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু বিক্ষোভ বেগ পাওয়ার আগেই তা রোধ করতে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৯৫১ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, অধিকারকর্মী, মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, এমনকি গত বিক্ষোভের প্রত্যক্ষদর্শীরাও রয়েছেন।
ইজিপসিয়ান কমিশন ফর রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডম অনুসারে, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়া, প্রচার চালানো, ভুয়া তথ্য ছড়ানো, বিক্ষোভের ডাক দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব কাজকর্মের মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসী প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে চেয়েছে ও জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র ছিল তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভ। গত শুক্রবারের বিক্ষোভও সেখানেই হয়েছে। মোবারকের পতনের পর মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। তিনি দেশটিতে নিষিদ্ধ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন। তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন সিসি। কিন্তু ২০১৩ সালে সিসি নেতৃত্বাধীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসির পতন হয়। তার জায়গায় প্রেসিডেন্টের আসন গ্রহণ করেন সিসি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সিসির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। মোবারকের আমলের চেয়েও কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে ন্যূনতম বিরোধীতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাকারী কোনো মন্তব্য করলেও তার পরিণতি হয় বিপজ্জনক।
এমতাবস্থায় গত সপ্তাহের বিক্ষোভ অনেকের কাছেই অবাক করা ছিল। সিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রথম ¯পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল ওই বিক্ষোভ। আর তাই এই পরবর্তী কোনো বিক্ষোভ দমনে সরকার সর্বোপরি চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় অনলাইন সেন্সরশিপ পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন নেটব্লকস জানিয়েছে, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম উপায় হচ্ছে ফেসবুক। এছাড়া, দেশের প্রায় ৫০০ ওয়েবসাইট আগ থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। উপরন্তু, চলতি সপ্তাহে বিবিসি ও মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত টিভি চ্যানেল আলহুরা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিল্পী, গীতিকার ও অন্যান্য তারকাদের ফেসবুক ও টুইটারে সিসির প্রতি আন্তরিক আনুগত্য প্রকাশের জন্য চাপ দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমে। বিদেশি সাংবাদিকদের ইমেইলের মাধ্যমে বলা হয়েছে, তাদের ওপর নজর রাখছে সরকার।