রাজকোটের ‘লোকাল বয়’ ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠান। দুর্দান্ত সুইং আর লাইন-লেন্থ নিয়ে ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক। যদিও শুরুর ছন্দটা তেমন ধরে রাখতে পারেননি। ইরফান ৭ বছর ধরে জাতীয় দলের বাইরে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে দারুণ বোলিং করেছিলেন ইরফান। ২ টেস্টে নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ ওয়ানেডেতে ৬ উইকেটে নেন তিনি। ২০০৯ সালে টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম ও একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে ছিলেন উইকেটশূন্য।
এবার ইরফানের ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে লড়ছে বাংলাদেশ। গতকাল রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ৩৫ বছর বয়সী ইরফান পাঠান। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন বাঁহাতি এই পেসার।
২০০৪ সালে পাঠান যখন প্রথমবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হন, তখন সম্মানজনক হারের জন্য মাঠে নামতো টাইগাররা। তবে সেই দলের সঙ্গে বর্তমান দলের অনেক তফাৎ দেখেন এ ভারতীয় পেসার। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ২০০৩-০৪ সাল থেকে দেখছি। তোমরা ক্রিকেটে অনেক উন্নতি করেছো। তোমরা ক্রিকেটপাগল জাতি। সবসময়ই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখো। আমার মনে হয়, তোমাদের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টও তেমনই স্বপ্ন দেখে।’
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমের মতো খেলোয়াড়রা। তবে ইরফান পাঠান বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থদেরও কৃতিত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু খেলোয়াড়রাই অবদান রাখছে না। ক্রিকেটের প্রসারে তোমাদের নিবেদিত-প্রাণ সমর্থকদেরও বড় অবদান রয়েছে। তোমরা কী আবেগপ্রবণ! ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশি ভক্ত-সমর্থকদের ভূমিকা সত্যিই অনন্য। এ কাজে তারা অন্যদের চেয়ে সেরা।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে মাশরাফির নেতৃত্ব। তার অধীনে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, ২০১৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে ওঠা। তিনটি এশিয়া কাপে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে টাইগাররা। এছাড়া মাশরাফির নেতৃত্বে এ বছর প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে হারানো, সেটাও মাশরাফির নেতৃত্বে। ইরফান পাঠানর তাই মাশরাফির নামটি আলাদাভাবে নিলেন। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি খুবই প্রতিভাবান। খুব ভালো একজন ক্রিকেটার। অসাধারণ নেতৃত্ব, দুর্দান্ত অধিনায়ক। আমি তার নেতৃত্বগুণ খুব পছন্দ করি। আমি তাকে অনুসরণ করি। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, পিস ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে আমি মাশরাফিকে কাছে থেকে দেখেছিলাম। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে তোমাদের ক্রিকেটের জন্য তিনি অনেক কিছু করতে পারবেন।’
ভারত সফরে সাকিব আল হাসান নেই। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় আইসিসি তাকে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। সাকিবকে নিয়ে ইরফান বলেন, ‘আমি এ সফরে সাকিবকে খুব মিস করছি। আমি এখানে তাকে দেখতে চেয়েছিলাম। তার উপস্থিতি ভারতের বিপক্ষে তোমাদের আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলতো। এখন যেহেতু এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছে সাকিব, আশা করি সে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরবে।’
ভারতের হয়ে ২৯ টেস্ট, ১২০ ওয়ানডে ও ২৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ইরফান পাঠান। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন এই বোলার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩০১ উইকেট নিয়েছেন ইরফান। এছাড়া ব্যাট হাতেও টেস্টে এক সেঞ্চুরি ও ৬ হাফসেঞ্চুরিতে ১১০৫ রান, ওয়ানডেতে ৫ ফিফটিতে ১৫৪৪ রান সংগ্রহ করেন তিনি।