সমন্বয়হীনতা ও নজরদারির অভাবেই পিয়াজসহ নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে সমন্বয়ের পাশপাশি বাজার তদারকি চালাতে হবে সারা বছর। এতে বাজারে ভারসাম্য পরিস্থিতি থাকবে। বাজার তদারকি না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পর্যাপ্ত তথ্য থাকে না। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটি নিয়ে থাকেন। অর্থনীতিবিদ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সার্বিক দিক দিয়ে অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় আছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের একটা দুশ্চিন্তার কারণ।
পিয়াজের বাজার এখন অস্থির। সরবরাহ কম থাকায় এমনটি হচ্ছে। এটা সাময়িক, সামনেই হয়তো এ অস্থিরতা কেটে যাবে। আমাদের যেটা প্রয়োজনা তা হলো বাজার নজরদারি। এই বাজার তদারকি আমাদের নেই।
অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি নেই বলেই একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। কোন দ্রব্যের সরবরাহ কি রকম, কোনটির চাহিদা কত, কোন পণ্য আমদানি করা দরকার, এগুলোতো মৌসুম শুরুর আগেই হিসাব-নিকাশ করতে হয়। এগুলোর তো দায়িত্ব হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের। কখনও কখনও দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বহীনতার কারণে এই কাজগুলো করে না, আবার কোন গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য করে না।
সরকারের ভিতরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকার পরিবর্তনও তো দেখা যাচ্ছে না। যে কোন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা এটা করতে পারে কারণ তারা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন পিয়াজের সাথে সাথে অন্যান্য অনেক কৃষিপণ্যের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের দেশে একটা পণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের অন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা আছে। এজন্য সবসময় উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা দরকার কিনা এইসব কাজ আমরা ঠিক মত করিনা দেখেই হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। আমাদের সঠিক নজরদারির অভাব রয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডির) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পিয়াজের বাজারের অস্থির পরিস্থিতিতে যেসব ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিয়েছে সেটা অন্য খাতের ব্যবসায়ীদেরও উৎসাহিত করেছে।
দেখা গেছে যে সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা যেহেতু বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল। কিছু কিছু কৃষি পণ্য আমদানি নির্ভর আর কিছূ পণ্য উৎপাদন দিয়ে মেটানো হয়। আমাদের বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং এ দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। বাজারে খুজরা পর্যায়ে মাঝে মাঝে মনিটর করে বাজারের সরবরাহ ও মূল্যের ক্ষেত্রে যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয় তাতে আসলে কোন ফল পাওয়া যায়না। আমাদের যে কৃষিপণ্যগুলো আছে তা সাপ্লাই চেইন-এ কোন বিধিবদ্ধ আইন দিয়ে পরিচালিত হয়না। কিছু কিছু বিধি নিষেধ আছে সেটা বিক্রেতাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কৃষি পণ্য সাপ্লাই – চেইনে যদি কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয় সেটাকে মনিটর করে ব্যবস্থা নেয়ার সেরকম কাঠামোতে দূর্বলতা আছে। আমাদের প্রয়োজনীয় যে সতেরটি কৃষিপণ্য রয়েছে সেই কৃষিপণ্যগুলোর জন্য আলাদাভাবে সাপ্লাই চেইনের আইনি কাঠামোতে সকলকে নিয়ে আসতে হবে। যেটার মধ্যে উৎপাদক, আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ের সকল বিক্রেতাকে নিবন্ধন নিতে হবে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মধ্যে তাদের লেনদেন করতে হবে। এবং কার কাছে কি মজুত আছে এবং কার কাছে কত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর তথ্য রাখতে হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের মনিটরিং টিমকে কাজ করতে হবে।