আগামী ১৬ই ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, জয় বাংলা স্লোগান আপামর জনসাধারণের স্লোগান। এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করেই সেদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি। এই স্লোগান আমাদের আত্মার সঙ্গে সম্পর্ক।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম। এছাড়া, আদালতের শুনানিতে অভিমত দেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বার কাউন্সিলের সহসভাপতি ইউসুফ হোসেন হ?ুমায়ূন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ই জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
শুনানিকালে আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, একাত্তরে ‘জয় বাংলা’ হয়ে উঠেছিল আমাদের মুক্তির আন্দোলনের প্রধান স্লোগান। তখন আদালত বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সবার স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। এ ছাড়া পাকিস্তানের অনেক কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন। পরে আদালত আগামী ১৬ই ডিসেম্বর থেকে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে ব্যবহারের অভিমত দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের সাবমিশন ছিলো সংবিধানের ৩ এবং ৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা বাংলা, রাষ্ট্রের প্রতীক, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা সব আছে, কিন্তু জাতীয় স্লোগান নেই এবং সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৭ই মার্চের ভাষণকে যেহেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনকারীর এ আবেদনকে সমর্থন করেছে। তিনি আরো বলেন, আদালত বলেছেন সামনে ১৬ই ডিসেম্বর বা পরবর্তীতে যেকোনো জাতীয় দিবসে রাষ্ট্রীয় সর্বস্তরের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহারের অভিমত দিয়েছেন। এবং হাইকোর্ট এই রুলের পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ জানয়ারি নির্ধারণ করেছেন।
ইউসুফ হোসেন হ?ুমায়ূন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ ছিল বাঙালির রাজনৈতিক স্লোগান। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা’ প্রধান রণধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জয় বাংলা’ ছিলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র। যে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। তাই ‘জয় বাংলা’কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা হোক। অনেক দেশে এটা আছে। আমাদের আইনজীবী মহলেরও দাবি এটা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। সুতরাং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বলেছি। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে দলমত নির্বেশেষে সবার হৃদয় উৎসারিত শব্দ ছিল ‘জয় বাংলা’। আমরা আশা করি, রিট আবেদনকারীর পক্ষে ‘জয় বাংলা’র পক্ষে আদালত রায় দেবেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আমাদের বর্তমান সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটিকে সংবিধানের অংশ করে নেয়া হয়েছে। সেই ভাষণের শেষ অংশ হচ্ছে জয় বাংলা। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী জয় বাংলা আমাদের সংবিধানের অংশ। তাই জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা উচিৎ। আমরা মনে করি অবশ্যই এটা আইনে পরিণত হবে। রিট আবেদনকারী আইনজীবী বশির আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয় বাংলা বলে ৭ই মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন। তাই জয় বাংলাকে রাষ্ট্রীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন করেছি। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্যে ও শপথের শেষে জয় বাংলা উচ্চারণ করার নির্দেশনা চেয়েছি রিট আবেদনে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জয়বাংলা উচ্চারণ করে অ্যাসেম্বলি শেষ করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে এই রিট আবেদনে।
এর আগে ২০১৭ সালে, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বশির আহমেদ। রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান কেন ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চান হাইকোর্ট। ওই রুলের ওপর শুনানিতে গতকাল হাইকোর্ট অভিমত দেন যে, আসছে ১৬ ডিসেম্বর থেকে সর্বস্তরে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।