তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ অঞ্চল ইদলিব। সিরিয়ার বাকি অংশে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতের পর এবার ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটির সরকার। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধে একের পর এক জয় পেয়ে যাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। যুদ্ধের প্রথম দিকে কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে গেলেও মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বাশার আল-আসাদ। সমগ্র সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে তার হাতে। বাকি শুধু ইদলিব। এখন সেটি দখলে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করেছে সিরিয়া ও রাশিয়ার যৌথ বাহিনী। গত একমাসে তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদের কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও গ্রামগুলো।
তবে তুরস্কের সাহায্যে সেখানে ভালো জবাবও দিচ্ছে বিদ্রোহী দলগুলোও। ইতিমধ্যে তুরস্কের ড্রোন ব্যবহার করে আসাদ বাহিনীকে কয়েকটি ক্ষেত্রে পিছু হটতে বাধ্য করেছে বিদ্রোহীরা। ফলে অনেকেই মনে করছেন, ইদলিবে যুদ্ধে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠছে তুরস্কের ড্রোন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রাশিয়া ও সিরিয়া ইদলিবে অভিযান শুরু করে। সঙ্গে যোগ দিয়েছে হিজবুল্লাহর মতো ইরানপন্থি সশস্ত্র দলগুলোও। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তুর্কিপন্থি বিদ্রোহীরা। তাদের সমর্থনে সেনা পাঠায় তুরস্কও। কিন্তু সিরিয়ার সেনাদের হাতে বিভিন্ন হামলায় প্রাণ হারায় তুরস্কের অন্তত ৫৪ সেনা। অবস্থা বেগতিক দেখে গত সপ্তাহে তুরস্ক সিরিয়ায় মোতায়েন করে কয়েক ডজন ড্রোন। পাশাপাশি ইদলিবে নিজেদের শক্তিও বৃদ্ধি করে যাচ্ছে দেশটি। আর এতেই ইদলিবের বিদ্রোহীরা আবারো প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে সমপ্রতি হারানো গ্রামগুলোর মধ্যে কয়েকটি পুনরায় উদ্ধারেও সক্ষম হয়েছে তারা। আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিদ্রোহীদের এক কমান্ডার জানান, ইদলিবের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাবাল আল-জাইয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম তারা পুনরায় দখল করেছে। ফলে সরকারি বাহিনীর অগ্রসর থমকে গেছে। একইসঙ্গে তাদের লাটাকিয়া ও আলেপ্পোর মধ্যেকার সংযোগ সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ইউসুফ হামুদ জানিয়েছেন, তাদের যোদ্ধারা এখন সিরিয়ার বাহিনীর কাছ থেকে কাফরানবেল শহর দখল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল সিরিয়া ও রাশিয়ার বাহিনী। তবে সেখানে ইরানপন্থি সশস্ত্র দলগুলো ও রাশিয়ার সেনারা একসঙ্গে তাদের প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানান হামুদ। এদিকে, রাশিয়ার সেনারা সারাকেব শহরে ঢুকে পড়েছে এবং যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পথে রয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শহরটিতে রুশ সেনারা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদ্রোহী দলগুলো সেখানে এখনো টিকে আছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, এখনো রুশ বাহিনীর সামনে বিদ্রোহীদের টিকে থাকার একমাত্র কারণ সমপ্রতি মোতায়েন করা তুরস্কের ড্রোন। গত রোববার তুরস্ক অপারেশন সিপ্রং শিল্ড ঘোষণা করে। এর উদ্দেশ্য ইদলিব থেকে সিরিয়ার সেনাদের হটিয়ে দেয়া। তবে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, এই অপারেশন আরো পূর্বেই শুরু করা হয়। সিরিয়া ৩৪ তুর্কি সেনাকে হত্যা করার পরই তুরস্ক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘদিন ধরেই তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে এই প্রথম তাদের জন্য ড্রোন মোতায়েন করেছে দেশটি। ড্রোনগুলো সিরিয়া ও তুরস্কের সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে।
তবে এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও এর অবস্থানের কারণে ভূমিতেও সফলতা পাচ্ছে তুর্কির সেনা ও সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। ইস্তাম্বুল মনে করে, এই ড্রোনগুলোই অবস্থা আবারো তাদের পক্ষে নিয়ে আসবে।
ইদলিবে কিছু উঁচু স্থান রয়েছে যেখানে অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলো সিরিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাকেব, নেইরাব ও আতারিবের মতো স্থানগুলোই ইদলিবে সিরিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রেখেছে। এক্ষেত্রে তুরস্কের ড্রোন গেম চেঞ্জারের ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করে তুর্কি সমরবিদরা।
যুদ্ধে তুরস্ক ব্যবহার করছে এএনকেএ-এস ও বায়রাক্তার-টিবি২ মডেলের ড্রোন। এগুলো সিরিয়ার সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে আসাদপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এয়ারপোর্টগুলোতেও হামলা চালাতে সক্ষম এই ড্রোন। ফলে কৌশলগত দিক থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। এরইমধ্যে সিরিয়ার বেশ কয়েকটি আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম ধ্বংস করেছে এই ড্রোন এমনটাই দাবি করছে তুরস্ক। এ ছাড়া, ইদলিবে যুদ্ধের মধ্যে সিরিয়া সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও হেজবুল্লাহর মধ্যকার একটি বৈঠকেও ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১০ জন প্রাণ হারান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া, তালহিয়া এলাকায় ড্রোন দিয়ে অন্তত ৯ হেজবুল্লাহ সেনাকে হত্যা করেছে তুরস্ক। ড্রোন থামাতে নতুন করে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সিরিয়াও। ইতিমধ্যে তুরস্কের তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে সিরিয়া। তবে তুরস্ক এখন পর্যন্ত একটি ড্রোন ধ্বংসের কথা নিশ্চিত করেছে।