ছুরি-কাঁচির নিচে শুয়েছেন ৮ বার। বাঁ পায়ের হাঁটুতে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কত যে রাত পার করেছেন ইয়ত্তা নেই। অন্য কেউ হলে খেলাই ছেড়ে দিতেন হয়তো। তবে হাল ছাড়েননি মাশরাফি। মাঠে দৌড়ান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এরপরও সবচেয়ে ভালো লেন্থে বলটা ফেলার চেষ্টা থাকে তার। ইনজুরি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন বাউন্ডারি বাঁচাতে, ছুটেন বলের পিছু। একটি রানও যদি বাঁচানো যায়, সেই আশায়।
কারণ তিনি দলের অধিনায়ক। অধিনায়ককে এমনই নিবেদিত প্রাণ হতে হয়। যেমনটা আমাদের মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার মতো অধিনায়ক আর ক’টা আছে ক্রিকেট দুনিয়ায়? নেই। মাশরাফি একজনই। আজ তিনি শেষবারের মতো পরবেন ‘ক্যাপটেন আর্মব্যান্ড’। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্বকে বিদায় বলেছেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডে শেষে যখন মাঠ ছাড়বেন, গর্বে মাথাটা উঁচুই থাকবে মাশরাফির। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে সফলতম অধিনায়ক যে তিনিই। তার অধীনে প্রায় ৫৮ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা।
১৯৮৬ সাল থেকে বর্তমান। গাজী আশরাফ থেকে তামিম ইকবাল। এ পর্যন্ত ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন ১৪ জন। সাফল্যের বিচারে মাশরাফির ধারে কাছেও নেই কেউ। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে এনে দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি জয়। ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মাশরাফির অধীনে ৮৭ ম্যাচে ৪৯ জয় কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। হেরেছে ৩৬টি। দুটি ম্যাচে ফল হয়নি। পরিসংখ্যানে মাশরাফির পর আছেন হাবিবুল বাশার সুমন। ২০০৪-২০০৭ পর্যন্ত ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৯ জয় পেয়েছেন বাশার। হেরেছেন ৪০ ম্যাচ। জয়ের শতকরা হার ৪২ শতাংশ।
২০১০ সালেই অধিনায়কের ঝাণ্ডা হাতে পেয়েছিলেন মাশরাফি। তবে ইনজুরির কারণে দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। চোটের কারণে ঘরের মাঠে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। সেবার সাকিবের নেতৃত্বে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি ২০১৪ সালে পুনরায় অধিনায়ক হওয়ার পর বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে এনে দিলেন সর্বোচ্চ সাফল্য। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেললো কোয়ার্টার ফাইনাল। দুই বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উঠলো সেমিফাইনালে। এসবের আগে ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। গত বছর আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে জেতা ত্রিদেশীয় ট্রফিটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। সেটাও মাশরাফির নেতৃত্বেই। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সটাও দেখে নেয়া যাক। ৮৭ ম্যাচে ৩৫.৭৪ গড়ে তার শিকার ১০১ উইকেট। অধিনায়ক ছাড়া পারফরম্যান্সটা যদিও আরেকটু ভালো। ১৩২ ম্যাচে ৩১.১৬ গড়ে ১৬৮ উইকেট। তবে মাশরাফি অধিনায়কের দায়িত্বটা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ে। যখন তার ১৪৫ কি.মি গতির ডেলিভারি ধীরে ধীরে নেমে এসেছে ১২০’র ঘরে। মাশরাফির আগে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নেয়া ক্রিকেটারই হাতেগোনা। পাকিস্তানের ইমরান খান-ওয়াসিম আকরাম, দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডার। ১লা মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ২ উইকেট নেয়ার সুবাদে তাদের কাতারে ঢুকে যান মাশরাফি। এদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম ১০৯ ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ১৫৮ উইকেট নিয়েছেন। ১৩৯ ম্যাচে ইমরান খানের শিকার ১৩১ উইকেট। প্রোটিয়া পেসার শন পোলক ৯৭ ম্যাচে নিয়েছেন ১৩৪ উইকেট। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান অধিনায়ক হোল্ডারের ৮৬ ম্যাচে শিকার ১০১ উইকেট।
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে আজ ৮৮তম ম্যাচ মাশরাফির। বিদায়ী ম্যাচে ৫০তম জয়ের মাইলফলকের হাতছানি তার সামনে। বাংলাদেশ দল কি পারবে মাশরাফিকে বিদায়ী পুরস্কারটা দিতে?
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক
সময় ম্যাচ জয় হার %
মাশরাফি ২০১০-২০ ৮৭ ৪৯ ৩৬ ৫৭.৬৪
বাশার ২০০৪-০৭ ৬৯ ২৯ ৪০ ৪২.০২
সাকিব ২০০৯-১৭ ৫০ ২৩ ২৬ ৪৬.৯৩
মুশফিক ২০১১-১৪ ৩৭ ১১ ২৪ ৩১.৪২
আশরাফুল ২০০৭-০৯ ৩৮ ৮ ৩০ ২১.০৫