প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় অন্তত ১৮৬টি দেশে। সম্প্রতি ভাইরাসটি জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশেও। এ পর্যন্ত নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন কয়েক হাজার মানুষ। মহামারি এ ভাইরাস রুখতে বাংলাদেশের সকল জেলা-উপজেলার মতো সিলেটেও চলছে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা। প্রশাসন, মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সচেতনতার প্রথম স্তরেই আছে দু’হাত সবসময় যতটা সম্ভব জীবাণুমুক্ত রাখা এবং মাস্ক ব্যবহার করা।
তবে সিলেটের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে হাত পরিষ্কার রাখার জীবাণুনাশক হ্যান্ড সেনিটাইজার এবং বিভিন্ন ধরনের মাস্কের। উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে ‘হ্যান্ড সেনিটাইজার’ এর পরিচিতি অনেকটা কম থাকলেও জীবাণুনাশক হিসেবে হেক্সাসল, ডেটল, সেভলন ইত্যাদি লিকুইড ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু গত ২-৩ দিন থেকে এগুলোর কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছে না নগরীর ফার্মেসিগুলোতে। আর খুব অল্প সংখ্যক পরিমাণে পাওয়া গেলেও তা যা ফুরিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকেই।
ক্রেতারা বেশি দামের তোয়াক্কা না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সেগুলো কিনতে। নগরীর চৌহাট্টাস্থ প্রায় সবগুলো ফার্মেসি খুঁজেও পাওয়া গেল না হেক্সাসল লিকুইড। একই অবস্থা দেখা গেল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন রাস্তার পাশের ফার্মেসিসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফার্মেসিগুলোতেও। এমন অবস্থায় নিজেদের অপারগতা স্বীকার করে কোনও কোনও ফার্মেসির কর্তব্যরতরা বিভিন্ন সুপার শপে হ্যান্ড সেনিটাইজার আর ফেইস মাস্ক পাওয়া যাবে বলে ক্রেতাদের অবহিত করেন। কিন্তু রিফাত, স্বপ্ন, ফিজা’র মতো বড় বড় সুপার শপগুলোতে ঘুরে ঘুরে পাওয়া গেল না মাস্ক বা হেক্সাসল।
নগরীর এক ফার্মেসিতে মাস্ক কিনতে এসে ইফতেখার নামে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, অনেক্ষণ ধরে বিভিন্ন ফার্মেসিতে ঘুরেও কোথাও পাচ্ছি না মাস্ক। নেই জিবাণুনাসক হ্যান্ড স্যানিটাইজারও। খুব চিন্তায় আছি। আর যেখানে পাওয়া যাচ্ছে মূল্য খুব বেশি। ফার্সেসির মালিকরা জানান, হেক্সাসল বা ফেইস মাস্ক কোনোটাই আমরা ক্রেতার চাহিদামতো বিক্রি করতে পারছি না।
কিছু মালামাল কোম্পানি থেকে আসলেও সেগুলো দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। তারপর থেকে অর্ডার দেওয়ার পরও সাপ্লাই আসছে না। সুতরাং ফার্মেসিতে আসা ক্রেতাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। এসব পণ্য কবে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না।
কেউ কেউ বললেন বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় কোম্পানিগুলো অনেক সময় পণ্যের অর্ডারও গ্রহণ করছে না। এদিকে সংকট দেখা দিয়েছে ফেইস মাস্করেও। কিছু কিছু সুপার শপে মাস্কের দেখা মিললেও এগুলোর দাম আকাশচুম্বি। সচরাচর এসব মাস্ক ২০-২৫ টাকা দামে বিক্রি হলেও দু’দিন যাবত সুপার শপ বা ফার্মেসিগুলোতে ভাগ্যক্রমে মাস্ক পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। অপরদিকে চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে কোনও পণ্য অতিরিক্ত ক্রয় না করার জন্য ভোক্তা-সাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। সরকার সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ অবস্থায় কৃত্রিম সংকট তৈরির প্রবণতা রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বানসহ দেশের এই ক্রান্তিকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি জনাব আবু তাহের মো. শোয়েব।