করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে মাঠে সক্রিয় পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সংক্রমণ বেড়েই চলছে।
দুই লক্ষাধিক সদস্যের এই বাহিনীতে রোববার পর্যন্ত মোট ৮৫৪ জন কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ১১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৫৫ জন।
তাদের মধ্যে ৮৫৪ জন পুলিশ হওয়ায় একক পেশাজীবী হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য মারাও গেছেন।
শুক্রবার পুলিশে আক্রান্ত সদস্য ছিল ৬৭৭ জন। শনিবার ৬১ জন বেড়ে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৭৪১ জনে। রোববার সারাদেশে মোট আক্রান্ত ৬৬৫ জনের মধ্যে পুলিশই ১১৩ জন।
রোববার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, আক্রান্ত ৮৫৪ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশে রয়েছেন ৪৪৯ জন; বাকি ৩০৫ জন সারাদেশে কর্মরত।
এখন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১ হাজার ২৫০ জন পুলিশ সদস্য, সুস্থ হয়েছেন ৫৭ জন; আইসোলেশনে রয়েছেন ৩১৫ জন।
এদিকে চট্টগ্রামে সুস্থ হওয়া এক পুলিশ সদস্য বলেছেন, সাহস নিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, কোনোভাবেই মনোবল হারালে চলবে না।
মনোবল হারালে চলবে না: করোনাভাইরাসজয়ী পুলিশ সদস্য
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষায় পুলিশ সদস্যদের আরও সাবধানে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
“মুখে মাস্ক অবশ্যই রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাত কোনোভাবেই মুখে দেওয়া যাবে না।”
করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে হওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মূল দায়িত্ব পালন করছে পুলিশই।
এছাড়া কোথাও রোগী পাওয়া গেলে ওই এলাকা লকডাউনের ব্যবস্থা নেওয়াসহ রোগীর কাছাকাছি যাওয়ার নানা কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে। মৃত কোভিড-১৯ রোগীদের দাফনের কাজেও যুক্ত থাকতে হচ্ছে এই বাহিনীর সদস্যদের।
আবার শ্রমিক সঙ্কটে ধান কাটার কাজেও নামতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। এছাড়া আবশ্যিক খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সেবায় যুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়া, দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারি ও কালোবাজারি রোধ, সরকারি ত্রাণ ও টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতেও ভূমিকা রাখতে হচ্ছে।
ভাবমূর্তি সঙ্কটে থাকা পুলিশের এই সঙ্কটকালীন ভূমিকা ইতোমধ্যে প্রশংসা পাচ্ছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশ সদস্যরা মানুষের সুরক্ষায় হাসিমুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, হচ্ছেন আক্রান্ত ও স্থাপন করছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেমে যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত রয়েছে বলে বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
“তাদের সুস্থ করে তুলতে পুলিশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।”