স্যানিটেশন বা পয়ঃনিষ্কাশনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ওয়াটারএইড এবং ইন্টারন্যাশনাল দলিত সলিডারিটি নেটওয়ার্ক। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে সামনের সারিতে অবস্থান করে এসব কর্মী তাদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে কাজ করছেন। তাই তাদের সুরক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই দেশগুলোর সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৯ শে নভেম্বর প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এসব শ্রমিক টয়লেট পরিষ্কার করেন। রাস্তা ঝাড়– দেন। ল্যাট্রিনের ময়লা পরিষ্কার করেন। স্যুয়ারেজ লাইন মেরামত করেন। কিন্তু তাদেরকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।
তাদের রয়েছে পিপিইর অভাব। এমন ঝুঁকিতে করণীয় কি সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। এ ছাড়া নেই চাকরির নিশ্চয়তা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবীমা এবং হাত ধোয়ার মতো সুবিধা। এসব দেশে যারা এসব পয়ঃনিষ্কাশনে কাজ করেন তাদেরকে সমাজে ছোট করে দেখা হয়। অন্য পেশায় যেতে চাইলে তাদেরকে আলাদা করে দেখা হয়।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নতুন গবেষণা করে দেখেছে ওয়াটারএইড। তাতে দেখা গেছে, এসব কর্মীর বেশির ভাগই করোনা মহামারিতে আরো খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। অনেককে কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নতুন করে কাজ দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণ সীমিত। কিভাবে পিপিই ব্যবহার করতে হয়, তা তারা জানে না। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে দিয়ে বাড়তি সময় কাজ করানো হয়। কিন্তু বাড়তি সময়ের বেতন দেয়া হয় না। লকডাউনের কারণে তাদের পরিবাহনে আসা-যাওয়ার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেককে মুখের মাস্ক ও অন্য সরঞ্জাম কিনতে হয়। এসব সরঞ্জাম তাদেরকে নিয়মিতভিত্তিতে দেয়া হয় না। ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক এডভোকেসির ম্যানেজার বানিতা সুনেজা বলেছেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার শহর গুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখেন এসব কর্মী। ততে তারা হলেন ‘হিডেন’ ওয়ার্কার, যাদের কথা কমই ভাবা হয়। কিন্তু তারা খুব নাজুক অবস্থায়, এমনকি প্রাণহানিকর অবস্থায় কাজ করেন। তারা সমাজে, ধর্মে বৈষম্যের শিকারে পরিণত হন। লকডাউনের কারণে ঝুঁকিটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যেসব কর্মী অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি বেশি। বেশির ভাগ নারী অনানুষ্ঠানিক কর্মীর জীবন প্রতিদিনই ঝুঁকিতে পড়ছে।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল দলিত সলিডারিটি নেটওয়ার্ক সমাজের নিম্নবর্ণের কর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এসব কাজে যেসব নিম্নবর্গের মানুষ নিয়োজিত তারা এ কাজ পান উত্তরাধিকার সূত্রে। কারণ, তারা জাত প্রথার শিকার। এই প্রথাটি বিদ্যমান আছে বাংলাদেশে। এখানে যারা রাস্তা পরিষ্কার করেন তারা দলিত শ্রেণির। তাদের বেশির ভাগই বসবাস করেন আলাদা করে দেয়া সুইপার কলোনিতে। এসব দেশের মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীরা তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী সংহতি এবং ত্বরিত পদক্ষেপ।