অনেক রাঁধুনির মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা— ভাতের মধ্যে কিছুটা তেল ঢেলে একটু নাড়াচাড়া করলেই সেটা পোলাও হয়ে যাবে। তেমনি সিদ্ধ চালে হলুদ, নুন আর ঝাল-মসলার পসরা সাজিয়ে প্লেটে দিতে পারলেই সেটা হয়ে যাবে খিচুড়ি
বাসা কিংবা বাইরের হোটেলে যেখানেই হোক না কেন, রান্নার ক্ষেত্রে প্রচলিত কিছু বদভ্যাসের কারণে আমাদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ক্রেতা-গ্রাহক বারবার তাদের চাহিদার কথা জানান, কিন্তু রাঁধুনি-বিক্রেতাদের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। সেই এক সনাতনী রীতি বেশি ঝাল-বেশি তেল আর চকচকে দেখতে হলেই সে রান্না হবে সুস্বাদু ও রুচিকর। একই আইটেম আবার বিভিন্নভাবে রান্না করা যেতে পারে। যেমন— ভাত, খিচুড়ি ও পোলাও সবই চাল থেকে তৈরি। অনেক রাঁধুনির মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা— ভাতের মধ্যে কিছুটা তেল ঢেলে একটু নাড়াচাড়া করলেই সেটা পোলাও হয়ে যাবে। তেমনি সিদ্ধ চালে হলুদ, নুন আর ঝাল-মসলার পসরা সাজিয়ে প্লেটে দিতে পারলেই সেটা হয়ে গেল খিচুড়ি। এমনি কিছু ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর ধারণা প্রচলিত আছে মাছ, মাংস ও সবজি রান্নায়— এমনকি জনপ্রিয় সালাদের আইটেম তৈরির ক্ষেত্রেও। এমন কিছু বদভ্যাসের কথা তুলে ধরা হলো—
ধোঁয়া ওঠা পর্যন্ত তেলে তাপ দেয়া: বেশির ভাগ রান্নাই শুরু হয় প্রথমে কড়াই কিংবা ফ্রাইপ্যানে তেল ঢালার মধ্য দিয়ে। চুলার তাপে কড়াই গরম হতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। তারপর সে তাপে কড়াইয়ে দেয়া তেলও ফুটতে শুরু করে। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তেল ঢেলে রেখে গরম হওয়ার সময়টুকুতে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। লক্ষ করা হয় কখন এ তেল থেকে ধোঁয়া ওঠা শুরু হয়। এটা একটা ভুল ধারণা, এতে পুড়ে গিয়ে তেলই শুধু নষ্ট হয় না, তা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। বিশেষ করে তেলের মধ্যে অনেক উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এভাবে ধোঁয়া ওঠা পর্যন্ত তাপ দিতে থাকলে তেল থেকে এসব উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি এভাবে ধোঁয়া ওঠা পর্যন্ত তেল জ্বাল দিলে পরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে।
খাবার বেশি নাড়াচাড়া না করা: আমাদের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা আছে— নাড়াচাড়া না করলে খাবার পুড়ে যাবে। বিশেষ করে পোলাও, বিরিয়ানি ও ভুনা খিচুড়ি কিংবা বিভিন্ন ধরনের ভাজি করার ক্ষেত্রে একটি বড় চামচ, খুন্তি অথবা বার দিয়ে চুলার উত্তাপে থাকা খাবার নাড়াচাড়া করা হয়। ফ্রাইপ্যানে রান্নার ক্ষেত্রে খাবারে তেল-মসলা দেয়ার পর কিছুক্ষণ তাপে রেখে তারপর এর দুই হাতল ধরে তুলে বেশ করে স্টিয়ার করা হয়। মনে করা হয়, এভাবে কয়েকবার নাড়াচাড়া বা স্টিয়ার করা সম্ভব হলে খাবারের স্বাদ ও গুণগত মান দুই-ই বৃদ্ধি পায়। বাস্তবে ধারণাটি ভুল, এতে খাবারের অনেক উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কড়াই ভর্তি করা: অনেক সময় ছোট পাত্রে অনেক মানুষের জন্য রান্না করতে গিয়ে কড়াই কিংবা পাতিলের গলা পর্যন্ত ভরে ফেলা হয়। এভাবে পাত্র ভর্তি করে রান্না করলে হয়তো দ্রুত সিদ্ধ হয়, কিন্তু এতে রান্নার স্বাদ অনেকাংশে হ্রাস পায়। বিশেষ করে এভাবে গলা পর্যন্ত ভর্তি করার ফলে পাত্র থেকে সহজে বাষ্প বের হতে পারে না। সেটি আটকে থেকে খাবারের স্বাদ নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে খাবারের অনেক ক্ষতিকর উপাদান এর থেকে বের হতে পারে না। ফলে খাবারে অনেক ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে।
কাটার সঙ্গে সঙ্গে চুলায় চাপানো: ক্ষুধাবশত অনেক ক্ষেত্রে খাবার কেটেই চুলায় চাপানো হয়। এটা একটা বাজে অভ্যাস। বিশেষ করে মসলা মাখানোর পর কিছু সময় খাবার রেখে দিতে হয়। এতে মসলা খাবারে মিশে যেতে পারে। আর মসলা খাবারে পুরোটা না মিশলে উপাদেয় খাবার তৈরি অনেক কঠিন হয়ে যায়।
রান্নার আগে ভালো করে না ধোয়া: মাছ, মাংস কিংবা সব খাবারই রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে এর ভেতরের ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে আসবে। পাশাপাশি ভেতরের ছিদ্রগুলোয় পানি প্রবেশ করলে তা উত্তাপের ক্রিয়ায় রান্না করা খাবারের স্বাদ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
নন-স্টিক ফ্রাইপ্যান: অনেক ক্ষেত্রে উচ্চতাপে রান্নার জন্যও আমরা ভুলে নন-স্টিক ফ্রাইপ্যান ব্যবহার করে থাকি। এখানে উচ্চ তাপে পাত্র থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হতে পারে। এগুলো খাবারে মিশে গিয়ে এর গুণগত মান ও স্বাদ দুই-ই নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে পারফ্লুরোকার্বন তথা পিএফসি নির্গত হলে তা খাবারের জন্য বিশেষ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নন-স্টিক প্যানে ধাতব নাড়ানি: রান্নার প্রয়োজনে অনেক সময় নন-স্টিক ফ্রাইপ্যানেও ধাতব নাড়ানি ব্যবহার হয়। এটা খাবার ও পাত্রের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর উপাদান তৈরি করে। ফলে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি কমে যায়।
গরম তরল ব্লেন্ড করা: অনেক ক্ষেত্রে রান্নার সময় প্রয়োজন হলে গরম অবস্থায়ই খাবারের উপাদানগুলো ব্লেন্ড করতে দেখা যায়। এতে খাবারের পুষ্টিমান কমে যায়। বিশেষ করে ব্লেন্ডারের জার যদি প্লাস্টিক কিংবা ব্যাকেলাইটের হয়, সেক্ষেত্রে গরম উপাদান ব্লেন্ডিংয়ের ফলে তার সঙ্গে খাবারের ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর মাধ্যমেও খাবারে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। তাই সবসময় ব্লেন্ডারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ঠা-া তরলকে গুরুত্ব দিতে হবে।
পাইরেক্স প্যানে বেশি তাপ দেয়া: পাইরেক্সের প্যান হালকা তাপে রান্নার ক্ষেত্রে অনেক উপযোগী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বেশি তাপে রান্নার জন্য ওভেনে পাইরেক্স প্যান ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতিকর।
বাটারের আধিক্য: অনেক রাঁধুনি রান্নার ক্ষেত্রে বেশি বাটার বা মাখন ব্যবহার করেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত বাটার না দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।ব:বা