মাথার তালু বা চাটিতে চুল না থাকলে তাকে ন্যাড়া বা বেল মাথা বলা হয়। চুলবিহীন এমন মাথা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত আছে। ন্যাড়া মাথার মানুষ সহজে হাটতলা-বটতলা গ্রামগঞ্জ কি শহর এলাকায় নজর কাড়েন
মাথার তালু বা চাটিতে চুল না থাকলে তাকে ন্যাড়া বা বেল মাথা বলা হয়। চুলবিহীন এমন মাথা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত আছে। ন্যাড়া মাথার মানুষ সহজে হাটতলা-বটতলা গ্রামগঞ্জ কি শহর এলাকায় নজর কাড়েন। আমোদ আর আহ্লাদের বিষয় হয়ে ওঠেন অনেক সময়। নানা চুটকিও চালু আছে তাদের নিয়ে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা যায়, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বছরের সবকটি দিন ন্যাড়া থাকেন। হিন্দুদের পরিবারের কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির ছেলেসন্তান ন্যাড়া হয়ে শোক প্রকাশ করে। মুসলমানদের মধ্যে যারা হজে যান, তারা ন্যাড়া হয়ে রওনা দেন। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় প্রিয় তারকাকে জানান দিতে তারকার স্টাইলে ন্যাড়া হন অনেকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ন্যাড়া মানুষ মত প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক সাহসী। অন্যদিকে গ্রামবাংলার সমাজে অনৈতিক কোনো কর্মকা-ে অভিযুক্তকেও ন্যাড়া করে দেয়া হয়। বিশেষ করে চোর ধরা পড়লে মাথা অর্ধেক ন্যাড়া করার অনেক রূপকথা চালু আছে সমাজে।
সোস্যাল সাইকোলজি অ্যান্ড পারসোনালিটি সায়েন্স জার্নালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক আলবার্ট ম্যানিস তার গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলে ধরে জানিয়েছেন, ন্যাড়া মাথার মানুষ সচরাচর ক্ষুরধার ও কঠিন স্বভাবের হয়ে থাকেন। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তাদের প্রভাবশালী ও বেশি পৌরুষ বিরাজ করে। ঠিক যেমনটা দেখা যায় শক্তিমান নেতাদের মধ্যে। ম্যানিস তার গবেষণাকালে তিন ধরনের পরীক্ষায় দেখেছেন, ন্যাড়া মাথার মানুষরা অনুভূতিগুলো প্রকাশে হন জেদি। অধ্যাপক আলবার্ট ম্যানিস বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হয়েছি, চুল কামিয়ে ফেলা মানুষদের পৌরুষবান, আধিপত্য বিস্তারকারী মনোভাব দেখে।’ মাথা কামিয়ে ন্যাড়া হওয়া ভয়ডরহীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ বলে তিনি মনে করেন।
ন্যাড়াদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছেন জাপানের রাজধানী টোকিওর একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ইয়োশিকো টোয়োদা। সেখানে চুলওয়ালাদের জন্য কোনো ছাড়ের ব্যবস্থা নেই। জাপানে বেল বা ন্যাড়া মাথা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। কিছু রেস্টুরেন্টে যারা ন্যাড়া হয়ে যাবে তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। শতকরা ২৬ ভাগ জাপানি এ সুযোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন আদেনারাস নামে এক সিনিয়র হেয়ার স্টাইলিস্ট। কেউ ন্যাড়া হয়ে নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে গেলে তার জন্য ৫০০ ইয়েন ছাড়! এবং প্রতি পাঁচজনে একজন সম্পূর্ণ ফ্রি!
ন্যাড়া হেইক্কার দেশ— বাংলাদেশ। ‘ন্যাড়া হেইক্কা’ বা ‘ন্যাড়া শেখ’ নামেই বাঙালির পরিচয় ছিল। বাঙালির আদি ধর্ম ছিল বৌদ্ধ। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মাথা ন্যাড়া করে রাখেন এবং সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। দশম ও একাদশ শতাব্দিজুড়ে ন্যাড়া মাথার বৌদ্ধদের অনেকেই মুসলমান হতে শুরু করেন। তখন তাদের ন্যাড়া শেখ বলা হতো।ব:বা