বড় কোনো ইস্যু না থাকলে আপাতত রাজপথে আন্দোলনের পরিবর্তে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে জামায়াত। দলটি বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের সফলতা-ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে নতুন কৌশল নির্ধারণে এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিচ্ছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দলকে গোছানো, নেতাকর্মীদের মানোন্নয়ন, উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনসহ নানা কর্মসূচির ভিত্তিতে এখন সারা দেশে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চারিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত দেশকে ১৫টি সাংগঠনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা গোপনে তৃণমূল পর্যায়ে সফর করছেন।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, শীর্ষ নেতারা জেলে থাকায় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় জামায়াতের গোপনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সব কাজ চলছে না। সে অনুযায়ী দু’বছর মেয়াদি জেলা কমিটির মেয়াদ থাকলেও এক বছর মেয়াদি উপজেলা কমিটিগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তাই জরুরিভাবে দলের কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই সাংগঠনিক জটিকা সফর শেষ হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়করা সারা দেশে সফর করছেন। একই সঙ্গে জামায়াতের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটি পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংকট মূহুর্তে জামায়াত তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থারকে সংগঠিত করছে । ইতোমধ্যে মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। তবে গ্রেপ্তার-নির্যাতন এড়াতে সব কাজই কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে হচ্ছে । এদিকে জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আগেই নতুন নামে আরেকটি দল করার প্রস্তাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দেওয়ার কারণে দলের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
সূত্রমতে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও তেমন সফলতা না পাওয়া এবং দল নিষিদ্ধের আশঙ্কাসহ নানামুখী সঙ্কটে এখন হতাশ জামায়াত। বিএনপির সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগে ১৯ দলীয় জোটের চলমান কর্মসূচিতেও খুব বেশি তৎপরতা নেই দলটির। কর্মসূচি পালনের নামে সংঘাত-সহিংসতার অভিযোগে সন্ত্রাসী দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য বিভিন্ন মহলের জোর তৎপরতায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দলটি। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজপথে আন্দোলনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও চাপ প্রয়োগকেই প্রাধান্য দিচ্ছে দলটি। এ সরকার যত বেশি স্থায়ী হবে জামায়াত তত রোষানলে পড়বে মনে করেই এসব কৌশল অবলম্বন করছে জামায়াত।
শীর্ষ নেতাদের মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় ও ১৯ দলীয় জোটের নানা কর্মসূচি পালনে কয়েক বছর বেশ সক্রিয় ছিল জামায়াত-শিবির। তবে এসব আন্দোলনে তেমন কোনো সফলতা না পাওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। ১২ ডিসেম্বর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবারও মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর এ হতাশার মাত্রা আরও বেড়েছে। কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই মূলত জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান আরও কঠোর হচ্ছে। বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী এখন এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই সর্বোচ্চ বিপদের মধ্যে রয়েছে দলটি। আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা না হলেও তার চেয়েও কঠোর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন এখন জামায়াত নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়াও জামায়াতের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১২ জন রয়েছেন কারাগারে, সাতজন বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আÍগোপনে। বাকি দুজনের একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার মামলায় জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি আইনি বিষয়াদি ছাড়া দলীয় অন্য কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন। তিনি গত ৮ মাস ধরে লন্ডনে। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় দেশে ফিরতে পারছেন না। অন্যজন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাছের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের, তিনিও রহস্যজনকভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছেন।