জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে— মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। আজ বুধবার (২৮ মে) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের সেরা সাংবাদিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়নের আহবানও জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ নীতিমালা প্রণীত হলে সংবাদ কর্মীরা তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারবেন। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রেস ইনিষ্টিটিউটের মহা-পরিচালক শাহ্ আলমগীর, কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস. এম আনোয়ার পারভেজ ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লাইফ স্টাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের সভাপতি এরফানুল হক নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের মহাসচিব আহমেদ সিরাজ, স্বাগত বক্তব্য সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসন মুন্না ও উত্তরাঞ্চলীয় মহা-সচিব আসাদুর রহমান ভূইয়া তপন। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা ও মানবিক বিপর্যয়ের সময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। এতে শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। দর্শকরা এ নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। মানবিক দিক বিবেচনা ও দায়িত্বশীলতার দিক থেকে এসময় প্রতিক্রিয়া নেওয়া উচিত নয়। কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো দেশে যত বড় ঘটনাই হোক না কেন দর্শকদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এমন কিছু দেখায় না। টেলিভিশন মিথ্যা সম্প্রচারের কেন্দ্র নয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, টকশো’ আর আলোচনার নামে ইচ্ছে মতো যা খুশি তা সম্প্রচার করা টেলিভিশনের নীতি বর্হিভূত। মহাজোট সরকারের সময় দলীয় লোকজন অপরাধ করে পার পায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধ করে দলীয় লোকজন পার পায় না বলে ইতোমধ্যে তার প্রমাণ পেয়েছেন। এর আগে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার এমন সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তার আমলে দলের কোন্দলে অপরাধী নিহত হয়েছেন, সেখানেও তিনি গেছেন। শিগগিরই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদিত হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, টেলিভিশনের বিরুদ্ধে দর্শকদের বিস্তর অভিযোগ। ইতোমধ্যে সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দর্শক, টিভি মালিক ও সাংবাদিকদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। সম্প্রচার নীতিমালার পাশাপাশি টেলিভিশন মালিকদের নিজস্ব একটি নীতিমালা তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশি চ্যালের প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করতে ভালো মানের খবর, বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলে দর্শকরা বিদেশি চ্যানেলের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। ‘গুণ অর্জন হয়েছে এবার মান অর্জন করতে হবে’ বলেও টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। ক্যাবল টিভি মালিকদের প্রতি অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, আইন অনুসারে প্রথম ৩০টি চ্যানেলের মধ্যে দেশীয় চ্যানেল থাকবে। কিন্তু খাতির ও দলীয় মনোভাব থাকায় এ আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে। দর্শকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও দেশীয় চ্যানেলের আসক্তির জন্য এসব করা উচিত নয়। দর্শকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে ইনু বলেন, ক্যাবল টিভি মালিকরা অতিরিক্ত চার্জ ও দর্শকদের হয়রানি করে। এসব বন্ধ করলে ক্যাবল টিভি মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কাজ করবে। টেলিভিশন মালিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে গঠনগত সংবাদ প্রচার করলে কোনো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হবে না বলে গ্যারান্টি দিচ্ছি। কিন্তু কোনো উস্কানি দেওয়া যাবে না। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি,তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সেরা সাংবাদিক’ মাই টিভির সিনিয়র রিপোর্টার প্যাট্রিক ডিকস্তা, চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার শাহ্ আলম শাহী, সময় সংবাদের রংপুর প্রতিনিধি রতন সরকার, ইন্ডিেেপন্ডন্ট টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি আহসান হাবীব অপু, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার আরাফাতুর রহমান, একুশে টিভির স্টাফ রিপোর্টার মিরাজ মিজুর হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং দশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। এছাড়া দর্শক জরিপে সেরা সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল একাত্তর টিভি, সেরা বিনোদন চ্যানেল এটিএন বাংলা, সেরা লাইভ টক শো উপস্থাপিকা নবনিতা চৌধুরী, সেরা শিশুতোষ অনুষ্ঠান আমরা করবো জয়, সেরা টক শো লাইভ একাত্তর জার্নালকে পুরস্কৃত করা হয়। বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন হাসান আহমেদ চৌধুরী, এটিএন বাংলা, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সলিমুল্লাহ সেলিম, এস এম আনোয়ার পারভেজ (কোয়াব), নিজাম উদ্দিন মাসুদ (কোয়াব), বিটিভি ওয়ার্ল্ড এর সিইও বাহার উদ্দিন খেলন, দিলিপ কুমার আগারওয়াল। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক বড়–ন ভৌমিক নয়ন।