র্যাব ১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ও মেজর আরিফ হোসেনের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। নারায়ণগঞ্জে পাঁচ অপহরণ ও খুনের ঘটনায় নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের দায়ের করা মামলায় আজ আদালত তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে প্রথমে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর তাঁদের আট দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। আজ নতুন করে তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হলো।
এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেছেন, তারেক ও আরিফের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ মণ্ডল আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেছেন, নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও আরিফ হোসেনের সখ্যতা গড়ে উঠে। নূর হোসেন অপহরণ, গুম, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সে ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদার। এসব অপরাধে তারাও জড়িয়ে পড়ে। ২৭ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। ইতিমধ্যেই ঘটনার দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক দালিলিক প্রমাণ মিলেছে তারেক ও আরিফের জড়িত থাকার। আটদিনের রিমাণ্ডে থাকার সময় তাদের কাছ থেকে গুরুত্ব্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
খুনের অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, দাবি তারেকের
সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। তারেক সাঈদ মোহাম্মদ নিজেই বক্তব্য রাখেন। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় প্রজন্মের কর্মকর্তা। তার বাবাও সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তাই টাকার জন্য নয়, সম্মানের জন্য তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। তাই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার বিরুদ্ধে খুনের ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রয়োজন হলে রিমান্ডে নেওয়া হোক আপত্তি নেই। আমিও চাই তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হোক।’
তবে আরিফ কোনো কথা বলেননি। তবে তিনি আদালতে আসার পর থেকেই বার বার চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
উল্লেখ্য ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিটির প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণের পর খুন করা হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা হয়। নজরুলসহ পাঁচজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। তার মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রথমে র্যাব-১১ থেকে তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন এবং এমএম রানাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে তাদের সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় হাইকোর্ট র্যার-১১’র সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গেপ্তারের নির্দেশ দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়।