রাজধানীর বাসা-বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে চলছে কোটি টাকার বাণিজ্য। পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যেসব ছিন্নমূল মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ময়লা সংগ্রহ করতেন, সমিতি গঠন করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁদের বের করে দিয়ে এখন একচ্ছত্রভাবে ময়লার ব্যবসায় মেতেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে মাসিক ৫০ থেকে ৭০ টাকা (অবস্থান ভেদে এর তারতম্য আছে) চুক্তিতে বর্জ্য নিয়ে যান পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সমিতির ঠিক করা লোকেরা। যেসব ছিন্নমূল মানুষ বাসা-বাড়ির ময়লা নিতেন তাঁদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে পুরো পাড়া কিংবা মহল্লায় সমিতির নামে ক্ষমতাসীন লোকজনের আধিপত্য। রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও মোহাম্মদপুরের মতো অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোয় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
কোটি টাকার ব্যবসা
ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ৫১১টি ময়লার কনটেইনার রয়েছে। ভ্যানশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ভ্যান প্রতিদিন ১০০ ফ্ল্যাট থেকে ময়লা আনে। আর একটি কনটেইনারে কমপক্ষে ২০টি ভ্যান ময়লা ফেলে। হিসাবে দেখা গেছে, সারা শহরে কমপক্ষে ১০ হাজার ২২০ ভ্যান সিটি করপোরেশনের কনটেইনারগুলোতে ময়লা ফেলছে। ময়লা নিয়ে যাওয়া বাবদ প্রতিটি ফ্ল্যাটের লোকজন গড়ে যদি ৬০ টাকা করে দেন, তা হলে এ থেকে প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট সমিতির আয় হয় ছয় কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
তবে সমিতির লোকজনকে মাসে প্রতিটি ভ্যানের ময়লা ফেলা বাবদ সিটি করপোরেশনের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নকে দিতে হয় ৩০০ টাকা। সে হিসাব প্রতি মাসে ইউনিয়নকে ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিতে হয়। অথচ ময়লা নিয়ে যেতে সিটি করপোরেশন কোনো টাকা নেওয়ার বিধান রাখেনি। এমনকি কাউকে এ ধরনের টাকা তোলার দায়িত্ব দেয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আলী আকবর প্রথম আলোর কাছে এ অর্থ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো বলা হয়েছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।’
সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী, কোথাও ময়লা সংগ্রহের ব্যবসা করতে হলে তাঁদের অবশ্যই সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ময়লা সংগ্রহকারী এসব সমিতির কেউ এই অনুমোদন দেখাতে পারেননি। মিরপুরে সেনপাড়ায় এ ধরনের একটি সমিতি পরিচালনা করেন বাদল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনকে মাসে মাসে টাকা দিয়ে এই ব্যবসা করছি।’ কিন্তু সিটি করপোরেশন বলছে, এ ধরনের কোনো বিষয় তারা জানে না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আ হ ম আবদুল্লাহ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে ডাস্টবিন পর্যন্ত ময়লা ফেলে আসা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। কিন্তু এটা তাঁরা না করে বিভিন্ন লোক নিয়োগ করেন। নগরবাসীর স্বার্থে আমরা ওই সব সমিতির লোকজনের অনুমোদন দিয়ে থাকি।’ এ ধরনের ব্যবসার কথা সিটি করপোরেশনের জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
হঠাৎ উধাও বর্জ্য সংগ্রহকারী
নগরবাসীর অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়াই বাসার ময়লা মাঝেমধ্যে সমিতির লোকজন নিতে আসেন না। তখন তাঁরা পড়েন বিপদে। এমনকি সংশ্লিষ্ট সমিতি লোকদের দেওয়া