সম্প্রতি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং ওআইসির মহাসচিব আয়াদ আমিন মাদানি ঢাকা সফরে এলেও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়নি৷ দশম সংসদ পাঁচ মাস পার করে ফেললেও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়মিত বৈঠকও
তেমন একটা হচ্ছে না। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন রওশন এরশাদ।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদ সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সফরে আসা সব বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও প্রতিনিধি–দলকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী যেন তাঁর দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন৷
গত মাসের শেষ সপ্তাহে দেওয়া দুই অনুচ্ছেদের এই িচঠিতে রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এটা আমাদের সরকার, সংসদ ও দেশের গণতান্ত্রিকচর্চার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে৷ পাশাপাশি এতে সংসদে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কিত ভুল ধারণাও কেটে যাবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বিরোধীদলীয় নেতার এই চিঠির পর এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অর্থাৎ বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এখন থেকে যাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়, সে জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছিল৷ ওই সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রধান সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। আর আ স ম আবদুর রব ১৯৮৮ সালের পর বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তখন আ স ম রবের সঙ্গে বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও প্রতিনিধিদলকে দেখা করার জন্য এরশাদ সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের সাবেক একাধিক কূটনীতিক গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদককেও বলেন, সাধারণত জাতীয় নির্বাচন শেষে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে এভাবে বিরোধীদলীয় নেতার অবস্থান স্পষ্ট করার নজির খুব একটা নেই।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, ফুমিও কিশিদা ও আয়াদ আমিন মাদানি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা না করলেও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান ও চীনের দুটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে।
একজন কূটনীতিকের মতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন রয়েছে। একইভাবে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে বিবেচনার ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে অনেকের মধ্যে৷ কারণ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পানিসম্পদমন্ত্রী, মসিউর রহমান স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী এবং মুজিবুল হক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সঙ্গে রয়েছেন।