পানি খাওয়ার রীতিতে খানিকটা পরিবর্তন আনতে পারলে তা আপনার লাইফস্টাইল ও স্বাস্থ্যে বড় ধরনের চ্যাঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। তার মানে এই না যে প্রতিদিন অতিরিক্ত বেশি পানি খেতে হবে। পানি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা আনলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, খাওয়ার পর ঢেঁকুর ওঠা এই ধরনের সমস্যা খুব দ্রুতই সমাধান হবে। স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার পর অথবা অতিরিক্ত খাবার না খেলেও পেট ভরা মনে হয় অনেকের। পানি খাওয়ার অভ্যাসে কিছু নিয়ম মানলেই এই সমস্যাও দ্রুত চলে যায়।
পানি খাওয়ার আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি
১. প্রথমে বসতে হবে। দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না। নিয়মিত খাবারের সময় যেমন বসতে হয়। পানি খাওয়ার সময়ও সেরকম বসতে হবে।
২. স্বাভাবিকভাবে চুমুক দিয়ে পানি খেতে হবে। ঢক ঢক করে বা বড় বড় ঢোক দিয়ে খুব দ্রুত পানি খাওয়া যাবে না। একবারে ঢক ঢক করে বেশি পানি খেয়ে ফেললে শরীর তা গ্রহণ করতে পারে না। এর বেশিরভাগই শরীর থেকে তখনই বের হয়ে যায়।
৩. সারাদিন বার বার অল্প পানি খেতে হবে।
৪. অন্তত ঘরে সাধারণত যে তাপমাত্রা থাকে সেই তাপমাত্রার পানি পান করতে হবে। মানে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি। তবে এর চেয়ে সামান্য একটু গরম হলে ভালো। ঠাণ্ডা পানি হজম শক্তি কমিয়ে দেয়।
৫. খাবার খাওয়ার সময় খুব অল্প পরিমাণ পানি পান করতে হবে। খাওয়ার সময় বেশি পানি খেলে পেটে খাবার পরিপাক বা হজম হওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে না। খাবার খাওয়ার সময় এই নিয়ম মনে রাখতে হবে–পাকস্থলীর ৫০ ভাগ পূর্ণ করতে হবে খাবার দিয়ে, পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ২৫ ভাগ। আর বাকি ২৫ ভাগ খালি রাখতে হবে পরিপাক রস এবং পরিপাক ক্রিয়া বা হজমের জন্য।
৬. উপরোক্ত একই কারণে খাওয়ার একদম আগে বা পরে বেশি পানি পান করা যাবে না। ৫০ ভাগ ভরতে হবে খাবার দিয়ে, ২৫ ভাগ পানি দিয়ে এবং বাকি ২৫ ভাগ খালি রাখতে হবে।
৭. যখনই তৃষ্ণা পাবে তখনই পানি খেতে হবে। পানি পিপাসা পাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এর মানে শরীর পানির অভাববোধ করছে। তাই তৃষ্ণা পেলেই পানি খেতে হবে।
৮. প্রত্যেকের শরীরের সাইজ, খাবারের পরিমাণ এবং লাইফস্টাইল আলাদা আলাদা। একজনের জন্য দিনে আট গ্লাস পানি প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সবার জন্য তা নাও হতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পানি পরিমাপ করার একটি পদ্ধতি রয়েছে। সে পদ্ধতিটি হল তৃষ্ণা। তৃষ্ণা পেলে পানি খেতে হবে। সারাদিন ধরে তৃষ্ণা পেলেই পানি খাওয়ার মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়া হয়ে যাবে।
৯. শরীরে সঠিক পরিমাণ পানি আছে কিনা তা জানার দ্বিতীয় উপায়টি হলো প্রস্রাব দেখা। যদি ইউরিন একদম পরিষ্কার এবং হলুদ রঙের হয় তাহলে শরীরে সঠিক পরিমাণে পানি রয়েছে। আর যদি প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হয় তাহলে আরো পানি পান করতে হবে।
১০. শরীরে পানির চাহিদা দেখার আরেকটি উপায় হচ্ছে ঠোঁট। ঠোঁট এখানে নির্দেশক। যদি ঠোঁট শুকনো থাকে বা ঘন ঘন শুকিয়ে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পানির স্বল্পতা রয়েছে। তখন বারবার অল্প অল্প পানি খেতে হবে।
পানি খাওয়ার এই নিয়মগুলো বিজ্ঞানসম্মত। নিজের সচেতনতা ব্যবহার করতে হবে এই নিয়মগুলোকে কার্যকর করতে।