ফ্লাডলাইটে উঁচু ক্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন হিথ স্ট্রিক। আরেক পাশে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে করাচ্ছিলেন গ্রাউন্ড ফিল্ডিং। খেলোয়াড়েরা কোচ আর বলের দিকে চোখ রাখতেই ব্যস্ত। নইলে খেয়াল করতেন, গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এক তরুণ সারাক্ষণ দোলাচ্ছিলেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ।
বাংলাদেশে এখন বাংলাদেশের পতাকার চেয়েও বেশি উড়ছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা। যেদিকেই তাকান আকাশি-সাদা আর গাঢ় সবুজ-হলুদের ওড়াউড়ি। এমন ‘লাতিন-আমেরিকা’ময় পরিবেশে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর সুযোগ করে দিল বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ, যে সিরিজে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম লাল-সবুজ পতাকাটা ওড়াতে চান বিজয়োল্লাস করতে করতেই।
কাল অনুশীলনে এসে মুশফিক কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটালেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঝ উইকেটে। হয়তো নতুন কোচকে উইকেট সম্পর্কে ধারণা দিলেন। এই উইকেটে দলীয় সমন্বয় কেমন হওয়া উচিত, আলোচনা হতে পারে সেটা নিয়েও। আলোচনায় থাকতে পারে আবহাওয়াও। পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী চার-পাঁচ দিনই যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ঢাকায়!
যা-ই হোক, একটা আলোচনা যে এ মুহূর্তে দলের নিত্যসঙ্গী, সেটা চোখ বুঝেই বলে দেওয়া যায়—নিজেদের ফিরে পাওয়ার আলোচনা। তিন ওয়ানডের এই সিরিজে মুশফিকুর রহিমের লক্ষ্য, ‘প্রতিটি ম্যাচ জেতা। অনেক দিন পর আমরা ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছি। কাদের সঙ্গে খেলা সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গত দুই বছর আমরা যেভাবে খেলে আসছিলাম সেভাবে খেলা। সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে এটা ফিরে আসার অনেক বড় একটা সুযোগ আমাদের জন্য।’
পেছনের হতাশা পেছনেই ফেলে ভারত সিরিজে নতুন একটা শুরু চান মুশফিক। চান ফেলে আসা দিনের অতৃপ্তি দূর করতে, ‘চাপ সে রকম না থাকলেও অতৃপ্তি একটা আছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ ছিল যেগুলো আমরা জিততে পারতাম। মাঝে আমরা মানসিক শক্তি বাড়ানোর ক্লাস করেছি। নতুন কোচিং স্টাফ এসেছে। সে জন্য চাচ্ছি ভালো কিছু দিয়ে শুরু করতে। আমাদের যে ভালো খেলার সামর্থ্য আছে, আশা করি সবাই সেটা দেখতে পাবে।’
খর্বশক্তির ভারতীয় দলকে এর আগে ভারতের ‘দ্বিতীয় দল’ বললেও তাদের হালকাভাবে নিচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। বরং তারুণ্যনির্ভর দলটিতেও যে থাকতে পারে অমিত সম্ভাবনা, সে জন্য সতর্ক করলেন নিজের দলকে, ‘তাদের কিছু ম্যাচ উইনার আছে। দলটার সবাই আইপিএলে ভালো খেলেছে। আমরা হয়তো কিছুটা অভিজ্ঞ। তবে ওরাও কিন্তু এই উপমহাদেশেরই খেলোয়াড়।’ অভিজ্ঞতার অভাব থাকলেও ভারতের এই দলে আছেন এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মোহিত শর্মা। আছেন সর্বোচ্চ রান করা রবিন উথাপ্পা। এ ছাড়া রায়না, ঋদ্ধিমান সাহা, পেসার উমেশ যাদবরাও আইপিএলে আলোকিত। বাংলাদেশ সফরের দলে সুযোগ পেয়ে তারা কিছু করে দেখাতে চাইবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।
তবে মুশফিকের বিশ্বাস, টানা সাত ওয়ানডে হারলেও মাঝের বিরতি পরিবর্তন এনেছে তাঁর খেলোয়াড়দের মানসিকতা এবং শরীরী ভাষায়ও। ভারত সিরিজে সেটাই হবে অস্ত্র। আর সুরেশ রায়নার অস্ত্র? তারুণ্য। ভারত অধিনায়ক বলছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে। দুই দলেই তরুণ খেলোয়াড় আছে। আমাদের সবাই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট এবং আইপিএলে ভালো খেলে এসেছে।’
কথাটা বলার সময় রায়না নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসানকে ভুলে যাননি। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে শিরোপা জেতাতে যে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের ভূমিকাও কম ছিল না! আইপিএলে ভালো খেলে আসা যদি শক্তিমত্তার একটা মানদণ্ড হয়, সিয়াটের বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার সেদিক দিয়ে পিছিয়ে রাখছেন না বাংলাদেশকেও।