গত বছরের শেষ ছয় মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কম-বেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিঘ্নিত হয়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তার পরও ব্যবসায়ীরা হাল ছাড়েননি। হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও তাঁরা পণ্য রপ্তানি সচল রেখেছেন। আর এ জন্যই রপ্তানি আয় এখনো সন্তোষজনক ধারাতেই আছে।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস, অর্থাৎ জুলাই-মে মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার ৭৩৭ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। আর এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। নানা বাধার মধ্যেও দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়ছে বলেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। পোশাক খাতের রপ্তানি আয় দুই হাজার ২১৭ কোটি টাকা, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় অব্যাহত আছে। চামড়া রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পণ্যের আয় ছিল ৩৬ কোটি ডলার। আবার চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় ২১ কোটি ৮১ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল মাত্র ৪৮ কোটি ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে তিন হাজার ৫০ কোটি ডলার৷ আর গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল দুই হাজার ৭০২ কোটি ডলার৷
এদিকে প্রধান পণ্যের পাশাপাশি কিছুটা অপ্রচলিত হলেও আসবাব রপ্তানি বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এ খাতের রপ্তানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে চার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় আসবাব রপ্তানি করছে চার থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে আসবাবের রপ্তানি আয় ছিল এক কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে চার কোটি ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।
আসবাবের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম এইচ রহমান বলেন, ‘বিশ্বে আসবাব রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীন। সম্প্রতি দেশটিতে শ্রমের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিদেিশ আমদানিকারকেরা নতুন দেশ খুঁজছেন। আর আমাদের শ্রমিক সস্তা হওয়ায় সম্ভাবনা বেড়েছে।’ রপ্তানি আয় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে রপ্তানির ওপর সরকারকে নগদ সহায়তা দিতে হবে। কারণ উচ্চ শুল্ক দিয়ে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এতে করে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়।
পোশাকশিল্পে ইতিবাচক ধারা থাকলেও পাট ও পাটজাত পণ্যে বরাবরের মতোই উল্টো পথেই হাঁটছে দেশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে খাতটি থেকে মাত্র ৭৫ কোটি ৬৩ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের এই সময়ে আয় হয়েছিল ৯৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্নক। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে সাত কোটি ৬৫ লাখ ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল সাত কোটি ৮১ লাখ ডলার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কাজী ইকবাল বলেন, ‘আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা আছে। সে জন্য বেশি জমি লাগে এমন কারখানা করে আমরা বেশি দূর এগোতে পারব না। তাই রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য প্রস্তুতের দিকে যেতে হবে। চীন, মালয়েশিয়া যেটি করেছে।’
চামড়া
৪৬.৮৬
কোটি ডলার
২৯.১১%
প্রবৃদ্ধি
হিমায়িত খাদ্য
৫৭.৮৪
কোটি ডলার
১৮.১৯%
প্রবৃদ্ধি
পাট ও পাটজাত পণ্য
৭৫.৬৩
কোটি ডলার
২০.২১%
প্রবৃদ্ধি
প্লাস্টিক পণ্য
৭.৬৫
কোটি ডলার
২.১৪%
প্রবৃদ্ধি
তৈরি পোশাক
২২১৭.৮
কোটি ডলার
১৪.৮৭%
প্রবৃদ্ধি