দল ক্ষমতায় এলে দেশে গুম-খুনের সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন খালেদা জিয়া। রোববার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে, দেশে গুম-খুন বাড়ছে। দেশে আজ মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। একদিন এর হিসাব আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে। যারা গুম-অপহরণ-খুন করেছে কেউ এ থেকে মাফ পাবে না।
ভবিষ্যতে দেশে এর বিচার হবে। আন্তর্জাতিক আদালতেও তাদের বিচার করা হবে।
আবারো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব বিলুপ্তির দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাবের তিন কর্মকর্তার সত্যিকারভাবে রিমান্ডে নিলে গুম-খুনের নিদের্শদাতাদের জিয়ার নাম বেরিয়ে আসবে। একজনের পর একজন গিয়ে শেখ হাসিনারও নাম আসবে।
গুম-খুনের হত্যাকা-ের পেছনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল হাসান জড়িত অভিযোগ করে অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিও জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে বর্তমান সরকারের আমলে জেলায় গুম-খুন-নির্যাতনে নিহত দলের নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে গুম-খুনে নিহত ৪৫ পরিবারের সদস্যরা নেত্রীর কাছে তাদের বেদনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় পরিবারের সদস্যদের মর্মস্পর্শী বক্তব্য শুনে অনেক নেতাকে অশ্রুসজল দেখাচ্ছিল। জেলার নেতারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় সর্বমোট ৬ গুম ও ৩৯ জন খুন-হত্যা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে দেয়া বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জে কে গডফাদার, দেশের মানুষ সবাই জানে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, তার (শামীম ওসমান) পাশে থাকবেন। এ থেকে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা গডফাদারের মা।
অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, সরকারকে বলবেন, এখনো সময় আছে, ক্ষমতা ছেড়ে দ্রুত নির্বাচন দিন।
র্যাবের গুম-হত্যার সঙ্গে অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়ার নাম উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশে ৬৫ জন গুম করা হয়েছে। খুন হয়েছে ৩১০ জন। এখনো এই গুম_খুন হচ্ছে। এসব গুমের সঙ্গে র্যাবের জিয়া জড়িত। তাকে র্যাব থেকে অপসারণ করতে হবে।
তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে। র্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। এই সংস্থাকে রাখা যাবে না। এরা টিকতে পারবে না।’
র্যারেব বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, জনগণকে বলবেন, র্যাব কোথাও গেলে তাদের ঘেরাও করবেন। মানুষজনকে এদের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত করুন।
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় জড়িত তিন র্যাব কর্মকর্তার রিমান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাদের রিমান্ডে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। লে. কর্নেল তারেক সাঈদকে ঠিকভাবে রিমান্ডে নিলে সে বলে দেবে কর্নেল জিয়ার নাম। হাসিনার নামও এরপর আসবে। হাসিনা এই অপরাধ থেকে কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না। মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পের অগি্নকা-ের ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, এই দলটি কত নির্মম। আওয়ামী লীগের কর্মীরা ও পুলিশ মিলে মিরপুরে মানুষজনকে ঘরের ভেতরে বন্ধ করে রেখে আগুন দিয়ে ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ।
আওয়ামী লীগ মানুষ নয়, তারা পশু, দানব। যখনই ক্ষমতায় থাকে, তারা গুম-খুন করে।
দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জেলা সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক সাংসদ শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান, জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাবু, স্থানীয় নেতা ওয়াহিদ চেয়ারম্যান, শাহজাহান চেয়ারম্যান, তোফায়েল আহমেদ, নিহত নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাওসার হামিদ, সালমা ইসলাম মায়া, মনোয়ারা বেগম, পারভীন আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক লীগের যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা সমন্বয়ক অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবদুল মজিদ, সাবেক মহিলা সাংসদ সাইমুম বেগম, জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ ব্যাপারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের পর খালেদা জিয়া প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন।