ব্রাজিলে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের আসরে আর্জেন্টিনার সূচনাটা শুভই হয়েছে। বসনিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মেসিরা। এখন উড়ছেন পরের ম্যাচে ইরানের সঙ্গে সহজ মোকাবিলার জন্য। এ রকম একটা সময়ে রাষ্ট্রীয় ঋণ নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেল দেশটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশ জারি করেছেন। তাতে আর্জেন্টিনার সরকারকে দেশটির বন্ডে ‘হেজ ফান্ডের’ মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের পাওনা দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার হলো মূল ঋণ। আর বাকিটা সুদ।
এর ফলে একদিকে আর্জেন্টিনার আপিল করা ‘হেজ ফান্ড’ বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়ার আবেদন বাতিল হয়ে গেল, অন্যদিকে ‘হেজ ফান্ড’ বিনিয়োগকারীরা সারা বিশ্বে আর্জেন্টিনা সরকারের সম্পদ কোথায় ছড়িয়ে আছে, তা জানার অধিকার লাভ করল।
‘হেজ ফান্ড’ বিনিয়োগকারী বলতে সাধারণভাবে এমন বিনিয়োগকারীদের বোঝায়, যারা অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থঋণ নিয়ে বেশি লাভের আশায় আরেক জায়গায় বিনিয়োগ করে। কিন্তু নিজেদের কোনো অর্থ থাকে না।
মার্কিন আদালতের এই আদেশের ফলে আর্জেন্টিনার প্রধান শেয়ারবাজারের সূচক দিনের শুরুতে ৬ শতাংশ কমে যায়, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন৷
তবে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, তাঁর সরকারের আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ পালনের ক্ষমতা নেই। একে জবরদস্তিমূলকভাবে অর্থ আদায়ের চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমি দেশকে এ রকম পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারি না।’ তবে এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে মনে করে তিনি।
২০০১ সালে চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ঋণগুলো দেউলিয়া ঘোষিত হয়৷ আর তখন থেকেই ‘হেজ ফান্ড’ বন্ড বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকারের এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর নেতৃত্বে আছে এনএমএল ও অরিলিয়াস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।
দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দেশটির বন্ডে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য একটি উপায় বের করা হয়। তার আওতায় প্রায় ৯২ শতাংশ বিনিয়োগকারী ২০০৫ ও ২০১০ সালে দুই দফায় বিনিয়োগ করা অর্থের এক-তৃতীয়াংশ ফেরত নিতে সম্মত হয়।
তবে ‘হেজ ফান্ড’ বিনিয়োগকারীরা এই শর্ত মেনে নেয়নি। তখন থেকেই সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলে আসছে, যা শেষ পর্যন্ত মামলায় গড়ায়।
২০১২ সালে এ রকম একটি আদালত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আর্জেন্টিনা নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ঘানায় আটকে দিয়েছিল বন্ড বিনিয়োগকারীরা।
আমেরিকার এবিসি স্টক এক্সচেঞ্জের অর্থনীতিবিদ সেবাস্তিয়ান সেঞ্চুরিয়ন রয়টার্সকে বলেন, ‘এ ধরনের আদেশের ফলে ‘হেজ ফান্ড’ বিনিয়োগকারীরা যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে এটা করার সুযোগ পাবে, যা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মধ্যে থাকা অন্য দেশগুলোর জন্য শঙ্কার কারণ হতে পারে।’
আর্জেন্টিনা সরকারও মনে করে, জোর করে এভাবে অর্থ দিতে বাধ্য করা হলে সেটা তাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও বিবিসি৷