পরবর্তী গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল করা হবে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় জয় এ আশা প্রকাশ করেন। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে বেসিস পুরস্কারপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সার, ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রের সেবকসহ প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা মত প্রকাশ ও প্রশ্ন করেন।
মতবিনিময় সভায় সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি চাই—নেক্সট গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউব বাংলাদেশ থেকে হবে। অন্য দেশ পারলে আমরা কেন পারব না? আপনারা এখানে সরকারি সহায়তার কথা বলছেন। দেখেন, যুক্তরাষ্ট্রেও কিন্তু সফটওয়্যার কিংবা কোনো উদ্ভাবনের জন্য সরকারি সহায়তা দেওয়া হয় না। সেখানে ব্যক্তিগত খাত থেকে তাদের সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তথ্য ও প্রযুক্তির জন্য ব্যক্তিগত খাত থেকে বিনিয়োগ গড়ে ওঠেনি। ব্যবসায়ীদের উচিত, ভালো একটি ওয়েবসাইট কেউ করলে সেখানে বিনিয়োগ করা। তাঁরা এগিয়ে এলে পরবর্তী ফেসবুক, গুগল বাংলাদেশ থেকে হবে।’
ফ্রিল্যান্সাররা উদ্যোক্তা হচ্ছেন—তাঁদের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে কি না একজন ফ্রিল্যান্সারের এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আপনাদের কোনো সম্পদ নাই যে ব্যাংকে সেগুলো জমা রেখে ঋণ নিতে পারবেন। তাই কীভাবে আপনাদের আর্থিক সহায়তা করা যায়, সেটা নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলব। এ বিষয়টা সমাধান করা যাবে। আমি আলাপ করব।’
এ সময় বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান জয়ের বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করেন, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফ্রিল্যান্সারদের সেখান থেকেও সহায়তা করা হবে।
এ ছাড়া লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের প্রকল্প পরিচালক বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওর কথা বলছি। তারাও সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে। আমার স্বপ্ন আছে—গার্মেন্টসশিল্প থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, আইটি খাতের আয় যেন সেটা অতিক্রম করে। আমাদের সরকারের লক্ষ্য ফ্রিল্যান্সার বাড়ানো ও আইটি পণ্য রপ্তানি করা। ভবিষ্যতেও যদি জনগণ আমাদের নির্বাচিত করে, তাহলে আইটির জন্য কী করব তার কোনো সীমা নাই।’
বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র থেকে নিবন্ধন করছেন, শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধনের বিষয়টি এই সেবাকেন্দ্রে চালু করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র থেকে ৭০ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে জন্মনিবন্ধনের সনদ ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই দেওয়া হবে। চাইলে ডেটাগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে।’
দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে ঠিকভাবে কাজ করা যায় না। এটা সুরাহার ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘এখন বিদ্যুতের অভাব নাই। শুধু বিভিন্ন এলাকায় লাইন না থাকায় সেটা পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেটাও খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আর ইন্টারনেট হাইস্পিড করার জন্য সাবমেরিন কেবল তো রয়েছে। এটাতে কোনো সমস্যা হলে ভারতের মাধ্যমে দুটি সাবস্টিটিউট কানেকশন লাইন রয়েছে।’
এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে চীনও আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘ডিজিটাল শব্দ শুনলে আগে টিটকিরি করা হতো। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এখন সবাই জানে ডিজিটাল কী। তবে এ অগ্রগতি আমাদের শুরু। এখনো আরও বাকি আছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল করার।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন প্রতিটি গ্রামে তথ্যসেবাকেন্দ্র করার। কিন্তু সেটা কবে পারব জানি না। তবে এই সেবাকেন্দ্র আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে গত সাড়ে পাঁচ বছর আগে কিছুই ছিল না। আপনারাই দেখেছেন আওয়ামী লীগ সরকার কোথায় থেকে দেশ কোথায় নিয়ে এসেছে।’
মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বিভাগ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।