ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা একজন ফুটবলারের জন্য আরাধ্য একটি বিষয়। আর সেটা যদি হয় বিশ্বকাপ আসরের মতো কোনো বিশাল টুর্নামেন্টে, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু উরুগুয়ের তারকা স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেস করে ফেললেন অন্যরকম এক হ্যাটট্রিক। এটিকে ‘কালো হ্যাটট্রিক’ বললেই বেশি যুতসই হবে। ইতালির সাথে প্রথম রাউন্ডের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় জর্জো কিয়েলিনিকে এক কামড় বসিয়ে দেন সুয়ারেস। ফুটবল মাঠের বাইরে কাউকে কামড় দিয়েছেন কিনা জানা যায়নি, তবে এমন ঘটনা ‘স্পোর্টস বিগেস্ট ভিলেইন’ খ্যাত সুয়ারেসের জীবনে একবার নয়; তিন তিনবার হয়ে গেল। এটিকে তাই বলা যায় খেয়ালি এই খেলোয়াড়ের ‘কালো হ্যাটট্রিক’।
বর্তমান সময়ের সেরা পাঁচ ফুটবলারের একজন এই সুয়ারেস। ফুটবল বোদ্ধাদের মতে, উরুগুয়ের প্রাণভোমরা সুয়ারেস যদি কয়েক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন, তাহলে কার্যত তারতো বটেই- দেশটির বিশ্বকাপও শেষ। খুবই কম কথা বলেন, কিন্তু রেগে গেলে প্রতিপক্ষের কাউকে কামড়ে দেন। এই ফুটবলারের কামড়া-কামড়ির বদঅভ্যাসটির শুরু কিন্তু ২০১০ সাল থেকেই। ওই সময় ক্লাব ফুটবলের এক খেলায় ঐতিহ্যবাহী ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহোফেনের খেলোয়াড় ওটমান বাকালকে কামড়ে দেন। শাস্তি হিসেবে সাত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়েন।
এর দুই বছর পর ২০১৩ সালেই আরেক ম্যাচে চেলসির বানিস্নাভ ইভানোভিচকে রীতিমত ঝাপটে ধরে তাকে কামড়ে দেন ‘স্পোর্টস বিগেস্ট ভিলেইন’ খ্যাত সুয়ারেস। সেই কেলেঙ্কারিকাণ্ডে তার ১০ ম্যাচের সাজা হয়। সেই টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে বর্ণবাদী গালি দিয়ে আরো ৯ ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন এই ‘ব্যাড বয়।‘
সর্বশেষ বিশ্বকাপ আসরের মতো বড় আসরে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে সমালোচনায় এলেন তিনি। এবার তার কয় ম্যাচ নিষিদ্ধের সাজা হয় তাই দেখার বিষয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অবশ্য তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অতীতের মতো আর কোনো দূর্নামের কাজ তিনি করবেন না। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি তিনি। সমালোচনার পাশাপাশি অনেকে তার পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। তারা দাবি তুলে বলছেন, এটা খেলারই অংশ (!)। রেগে গেলে কেউ পা দিয়ে, কেউবা হাত দিয়ে প্রতিপক্ষকে আঘাত করে। এখন সেই ভিডিও দেখে দেখে কি শাস্তি দেয়া হবে? তাহলে সিংহভাগ খেলোয়াড়ই শাস্তির খড়গে পড়বেন।
উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিসাও তাই সুয়ারেসের পক্ষ নিয়েছেন। সুয়ারেসের কামড়কাণ্ডের পর খোদ প্রেসিডেন্টই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন তার পক্ষে! বলেছেন, ‘আমরা তাঁকে একজন দার্শনিক বা একজন মেকানিক হিসেবে নির্বাচন করিনি। তাঁকে খুব ভালো আচার-আচরণ করতে হবে তা-ও নয়। সে দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়।’ মুজিসা প্রশ্ন তুলেছেন সুয়ারেসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পদ্ধতি নিয়েই, ‘আমি শিখেছিলাম ফুটবলে রেফারির সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করতে হয়। যদি আমরা টিভিতে ফুটেজ দেখেই সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে না দেওয়া অসংখ্য পেনাল্টি এবং হ্যান্ডবলও নতুন করে দিতে হবে।’
সুয়ারেসের হয়ে আইনজীবী আলেহান্দ্রো বালবি বলেছেন, ফেডারেশন কর্মকর্তারা সুয়ারেসের পাশে আছেন। ফিফা হয়তো তাঁকে নিষিদ্ধ করবে, কারণ এ রকম নজির আরও আছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত, এটি নৈমিত্তিক ঘটনা। কিয়েলিনি যদি তার কাঁধের আঁচড় দেখাতে পারে, সুয়ারেসও তার থেঁতলানো চোখ দেখাতে পারে।’ সুয়ারেসের ঘটনা নিয়ে এত শোরগোলের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন কারা, তা-ও যেন বুঝতে পারছেন তিনি, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই, ঘটনা ঘটেছে কারণ সে সুয়ারেস। দ্বিতীয়ত ইতালি বাদ পড়েছে। ইংল্যান্ড ও ইতালি থেকে ফিফার ওপর প্রচুর চাপ আছে।’
ফিফাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বালবি বলেছেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ই যদি এভাবে তাদের ক্ষত দেখাতে শুরু করে এবং ফিফা যদি প্রতিটিই তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাপারগুলো আরও জটিল হয়ে উঠবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব, যাতে সুয়ারেস সবচেয়ে ভালোভাবে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।‘