এত আবেগ ভালো নয়! চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়ের পর ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়দের কান্নার সমালোচনা করে এমন মন্তব্যই করেছিলেন সাবেকেরা। তবে ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাইরে থেকে কে কী বললেন, এসব নিয়ে একদমই ভাবছেন না তিনি।
ব্রাজিলীয়দের আবেগকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যায়িত করে সিলভা বলেন, ‘ওই ম্যাচে জয়ের জন্য আমাদের ওপর খুব চাপ ছিল। আমরা জানতাম, নিজেদের সেরাটাই ঢেলে দিতে হবে আমাদের। জয়ের জন্য প্রচণ্ড ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকার পর যখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়, আবেগী না হয়ে পারা যায় না।’
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থাটাও জানিয়েছেন ব্রাজিলীয় অধিনায়ক, ‘মানসিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী আছি। যেটা করার দরকার, সেটাই করছি।’
দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে পেনাল্টি ঠেকিয়ে গোলরক্ষক হুলিও সিজার হু হু করে কেঁদেছেন। ভাগ্যের জোরে বিশ্বকাপে টিকে থাকায় আবেগে কেঁদেছেন ডেভিড লুইজ, নেইমারসহ অনেকেই। কেঁদেছেন অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাও। খেলোয়াড়দের মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে পরশু ব্রাজিলের অনুশীলন শিবিরে মনোবিজ্ঞানী রেগিনা ব্রান্দাওকে ডেকে এনেছিলেন কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারি।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে জাতীয় সংগীত নেইমারদের চোখে নামায় জলের ধারা। তা নিয়ে ব্রাজিলের গণমাধ্যমগুলো দেশাত্মবোধের আবেগকে বাহবা দিয়ে শব্দের পর শব্দ গেঁথেছে। সেই গণমাধ্যমই এখন প্রশ্ন তুলেছে দলের মানসিক শক্তি নিয়ে। এই দল বিশ্বকাপ জিততে পারবে কি না, তা নিয়েও তারা সন্দিহান।
ব্রাজিল কিংবদন্তিরাও জানিয়েছেন দল নিয়ে তাঁদের উত্কণ্ঠার কথা। জিকো তো বলেই দিয়েছেন, ‘মাঠে খেলোয়াড়দের মনোযোগে ঘাটতি আছে। অনেকেই খুব সহজেই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কয়েকজন তো আছে মাঠে নিজের খেলাটাই ভুলে যাচ্ছে। নিজেদের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।’ ১৯৭০-এর বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তো রীতিমতো বিরক্ত, ‘ওরা জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় কাঁদে, চোট পেলে কাঁদে, পেনাল্টির সময় কাঁদে…এসব কান্না বন্ধ করতে হবে! অনেক হয়েছে।’
প্রশ্ন উঠেছে সিলভার অধিনায়কত্ব নিয়েও। অন্যরা না হয় কাঁদলেন, অধিনায়ক হয়েও সিলভা কাঁদলেন কেন? এমন প্রশ্নও তোলা হচ্ছেন? এসব সমালোচনাকে অবশ্য একদমই পাত্তা দিচ্ছেন না সিলভা, ‘এ ধরনের কথা যখন বলা হয়, তখন সেদিক থেকে আমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হয়। নেতা (স্কলারি) আমাদের পাশে আছেন। তিনি আমাদের অধিনায়ক। বাইরে থেকে কে কী বলছে, সেসব আমি পরোয়া করি না।’ এরপর ব্রাজিলীয় অধিনায়ক বললেন, ‘নিজের কাজ নিয়েই কেবল আমি ভাবছি। আমি এ রকমই। আমি খুবই আবেগপ্রবণ। এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। কখনোই তা আমার খেলায় প্রভাব ফেলে না। আবেগ সব কিছু কঠিন করে ফেলে, এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। জীবনে অনেক কঠিন মুহূর্ত পার করে এসেছি। আমার যক্ষ্না হয়েছিল, জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু মাঠ, মাঠের বাইরে সব জায়গায় আমি জয়ী।’ সূত্র: এএফপি