বিশ্বকাপে মাঠের মধ্যে রেকর্ড তো হচ্ছেই, মাঠের বাইরেও চুপিসারে রেকর্ডের পর রেকর্ড করে চলেছে কোর্তানা। মাইক্রোসফ্টের এই ভার্চুয়াল কন্যা এখন পর্যন্ত যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, তা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। কোয়ার্টার ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে আমরাই জোর গলায় কোর্তানার এই রিপোর্টটি লিখেছিলাম যে, সেমি ফাইনালে যাচ্ছে ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস।
নানা রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এই লেখা নিয়ে। অনেকে বিশ্বাস করেছিলেন, অনেকেই আবার করেননি। অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করেছিল। কিন্তু শেষমেশ কোর্তানার মুখেই ফুল-চন্দন পড়েছে। নক-আউট রাউন্ড থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা শুরু করে মাইক্রোসফ্টের এই সফ্টওয়্যার। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচের সব ক’টিতে কোর্তানার বাজি ধরা দলই জয়ী হয়েছে।
এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ইসরাত জাহান তন্বী শৈশব থেকেই গান এবং নাচের মাধ্যমে টেলিভিশন মিডিয়ার সঙ্গে পরিচয় ছিল। এরপর র্যাম্প, ফটোশুটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। ২০০৮-এ বিজ্ঞাপন আর নাটকের মধ্য দিয়ে আবার টেলিভিশনে প্রত্যাবর্তন। তবে এবার আর ছোট্ট তন্বীটি নয়। একের পর এক অনেকগুলো টিভি নাটকে দর্শকদের মনে দোলা দিয়েছেন। অভিনয়কেই ধ্যানজ্ঞান মনে করে নিজের কাজের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান তন্বী।
এটিএন টাইমস মুখোমুখি হয়েছিল এ অভিনেত্রীর।
বিশ্বকাপ নিয়েই আলাপটা শুরু হয়। আর্জেন্টিনার সমর্থক ইসরাত বলেন, ‘আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলবে, এটা আমি নিশ্চিত। ইনশাল্লাহ ভাগ্যে থাকলে কাপটাও আর্জেন্টিনাই নিবে। আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে সিওর আমাকে বিজয় মিছিলে দেখা যাবে।’
ছোটবেলা থেকে ইসরাতের স্বপ্ন বড় একজন মানুষ হওয়ার। ভাবতেন মিডিয়াতে কাজ করবেন। আয়নাকে ক্যামেরা ভেবে চর্চা করতেন। বিটিভিতে গান, নাচের অনুষ্ঠানগুলো করার পাশাপাশি কিশোর বয়সেই যোগ দেন থিয়েটারে। ইসরাতের ভাষায়, ‘ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকে থিয়েটারের কাজ শুরু করি। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে প্রথম একটা র্যাম্প শো করি। এরপর টুকটাক ফটোশুটের কাজ। ২০০৮ সালে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই রিপন খানের পরিচালনায় একটা টিভি বিজ্ঞাপনের জন্য। আর প্রথম নাটক ‘আউট অফ কন্ট্রোল’, এতে দিলারা জামান, ড. ইনামুল হক স্যার, আহমেদ রুবেলের সাথে কাজ করেছি। এভাবেই আমার যাত্রা শুরু।’
নিজের কাজ দিয়েই বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান আর চাইছেন গণমাধ্যম নিয়ে মানুষের মনে অনেক সময়ে যে নেতিবাচক চিন্তা আছে, সেটাও দূর করতে। ইসরাত বলেন, ‘এত দূর আসার পেছনে আমার চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি কঠিন ছিল। আজকে ইসরাত তন্বী হিসেবে আমি যে জায়গায় এসেছি, সেটা আমার প্রতিভার কারণেই এসেছি। আমি তারকা হতে চাই না, আমি হতে চাই চাঁদ। নিজেকে চাঁদ হিসেবেই দেখতে চাই। আমি চাই, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে।’
মিডিয়াতে এখন তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান অভিনয়। বলেন, ‘অভিনয়ই আমার জীবন, শুধুই অভিনয়, আর কিছুই নয়। গান এখন আর খুব একটা করছি না, কিন্তু নাচ আর অভিনয়টা অনেক বেশি উপভোগ করি।’
নিজের কোন কাজগুলো কখনো ভুলবেন না, এ প্রশ্ন করলে ইসরাত অনেকগুলো কাজের কথা জানালেন, ‘প্রথমে যেটা বলতে যাচ্ছি সেটা হচ্ছে, আমি একটা মিউজিক ভিডিও করেছিলাম, শিরোনাম–এ তুমি আমার। শিল্পী রাফাত এবং আঁখি আলমগীর। ভিডিওটার মেকিং পুওর হলেও আমার অ্যাক্টিং আর রাফাতের গানের জন্য হিট। আমার সার্থকতা হলো এ ভিডিওটা দেখার পর একজন ইমোশনাল মানুষ কাঁদবেই। তাই এই কাজটা কোনোদিন ভুলব না। আরও অনেক কাজ আছে, যেমন ‘ফিরে যায় ফিরে আসে’ নামের একটা নাটকের শুটিং করতে যাই আউটডোরে, ওইদিন ছিল সবচেয়ে বেশি শীত। গাজীপুর ভাওয়াল রেলস্টেশনে সারারাত, একটানা ১৮ ঘণ্টা শুটিং করি কোনো গরম কাপড় ছাড়া। অনেক কষ্টে হলেও কাজটা ভাল হয়েছে। এ রকম অনেকে আছে…।’
অভিনয়ে যেমন মানুষকে কাঁদাতে পারেন, তেমনি নিজে কাঁদেন শিশুদের কষ্ট দেখলে। বিশেষ করে রাস্তার পাশের অসহায় শিশুদের জন্য মন কাঁদে ইসরাতের। এমনকি পশুপাখিদের কষ্টও তাকে কষ্ট দেয়। পথশিশু আর পথের পাশে অবহেলিত পশুপাখিদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে, করবেন প্রত্যয়ী তন্বী।
ঈদ সাধারণত পরিবারের সঙ্গেই করেন কুমিল্লার মেয়ে ইসরাত। ‘ঈদে বাবা মা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাই, টিভিতে নিজের প্রোগ্রামগুলো দেখি, সন্ধ্যায় ছোটভাই ফাহিমকে নিয়ে বাইকে ঘুরতে বের হই। আর সারা রাত কাজিনরা মিলে আড্ডা, মাস্তি…এই তো।’
এবারের ঈদে ইসরাত তন্বীর বেশকিছু নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচারিত হবে। এর মধ্যে আছে–টেলিফিল্ম ‘বনসাঁই মন’, ‘আহা নায়িকা’, ‘হলুদ পুতুল’।