বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে করের বোঝা না বাড়িয়ে তার আওতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় মূসক দিবস উপলক্ষে সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারীদের সম্মাননা ও আলোচনা সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি (এনবিআর) এসব আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূল্যসংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট প্রদানকারী ১২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করদাতাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো জরুরি। সে জন্য করদাতা ও কর আহরণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে মানুষ কর দিতে আরও আগ্রহী হবে। তারা যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন ৩০.১ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭২ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২৪৮ মিলিয়ন। প্রতিবেশী পাকিস্তানের রপ্তানি আয় এখনও মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার। বাজেটকে উচ্চাবিলাসী বলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তার আমলে দুই বার বাজেট হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ছিল। এরমধ্যে উন্নয়ন ব্যয় মাত্র ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরও একই পরিমাণ বাজেট ছিল। দেশ পরিবর্তন হয়েছে, অর্থনীতি পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তিনি বাজেট পরিবর্তন করতে পারেননি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাজেট পরিবর্তন করতে পেরেছে আর বাস্তবায়নও করেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিএনপির হরতাল অবরোধের পরও ২ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেটে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কম হয়েছে। এবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীল না থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন হবে বলে জানান তিনি। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি তাদের আন্দোলনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি দিলেও তা সম্ভব হবে না। নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া ভুল করেছেন। তাকে আবার ৫ বছর ধৈর্য ধরতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, এফবিসিসিআই’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, এনবিআরের মূসক নীতির সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সবচেয়ে বেশি মূসক জমা দিয়েছে তাদেরকে সম্মাননা দিয়েছে এনবিআর। এবার উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূসক পরিশোধ করা ১২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। এরমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৯টি প্রতিষ্ঠান, জেলা পর্যায়ে ১১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতা নির্বাচন করে পুরস্কার দেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে উৎপাদন পর্যায়ে তিন, সেবা পর্যায়ে তিন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে তিন প্রতিষ্ঠান। জাতীয় পর্যায়ে সেরা মূসকদাতার পুরস্কার পাওয়া ৯ প্রতিষ্ঠান হলো- উৎপাদন ক্যাটিগরিতে হবিগঞ্জের মেসার্স রশিদপুর কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন, মৌলভীবাজার ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসফিল্ড প্রজেক্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন লিমিটেড।
সেবা ক্যাটিগরিতে নরসিংদীর আরএফএল প্লাস্টিকস্ লি., টিইউভি এসইউডি বাংলাদেশ (প্রা.) লি., ন্যাশনাল টেলিভিশন লিমিটেড। ব্যবসা পর্যায়ে হুওয়াই টেকনোলোজিস বিডি লি., মেসার্স এমএম ইস্পাহানী (বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ) ও লালমাটিয়ার ব্র্যাক আড়ং। সারাদেশ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাভারের মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজেস লি., ধানমন্ডির পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লি., উত্তরার আড়ং, মুন্সীগঞ্জের এএম অটো ব্রিকস, পদ্মা রিসোর্ট, সিটি কর্ণার, নারায়ণগঞ্জের পারটেক্স পেপার মিলস্ লি., পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ লি., আর. এইচ ট্রেডিং, নরসিংদীর মেসার্স টেকনো ড্রাগস, ড্রিম হলিডে লি., কালাচাঁন দাস, গাজীপুরের মেসার্স রেডিয়েন্ট ফার্মা লি., মেসার্স ব্র্যাক সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, গ্যালারি এ্যাপেক্স, ময়মনসিংহের আকিজ সিরামিকস্ লি., হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, মানিকগঞ্জের রাজ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, পেন্টা ট্রেডিং লি., টাঙ্গাইলের মাসাফি ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিজ লি., এলেঙ্গা রিসোর্ট লি., যমুনা ট্রেডার্স, জামালপুরের মেসার্স হেমাস কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস্ প্রাইভেট লি., নতুন কুঁড়ি কোচিং সেন্টার, নেত্রকোণার হীরা সোপ ফ্যাক্টরি, গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভা-ার, শিল্পী এন্টারপ্রাইজ, চট্টগ্রামের দি কনসলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস্ কোং (বিডি) লি., মেসার্স কে সি জে অ্যান্ড এসোসিয়েটেড লি., এ এম চ্যানেল লি., রাঙ্গামাটির বিএফআইডিসি লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স, কুমিল্লার এএম চ্যানেল লি., ফেনীর মেসার্স আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরি লি., মেসার্স বনফুল অ্যান্ড কোং, মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজ, নোয়াখালীর গ্লোব বিস্কুট অ্যান্ড ডেইরি মিল্ক লি., আমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মেসার্স সুলভ বিতান, চাঁদপুরের ব্যবসা নাহার ট্রেডিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লি., ক্যাফে আবদুল্লাহ, রংপুরের মেসার্স নিটল মটরস্ লি., মেসার্স প্যারাডাইস কেবলস্ লি., লালমনিরহাটের মেসার্স আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লি., দিনাজপুরের মেসার্স মির্জা ওভেন ব্যাগ প্রাইভেট লি., মেসার্স মনি এন্টারপ্রাইজ, নীলফামারীর মেসার্স গ্লোরী সিরামিকস্ (প্রা.) লি., ঠাকুরগাঁওয়ের মেসার্স ইমরোজ ট্রেডার্স, পঞ্চগড়ের মেসার্স এস এম ক্যাবল নেটওয়ার্ক, গাইবান্ধার মেসার্স নিবারণ চন্দ্র সাহা, যশোরের মেসার্স রেসকো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি, গ্রীন লাইন পরিবহন, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লি., কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ফরিদপুরের বাগাট রাজ কুমার মিষ্টান্ন ভা-ার, নড়াইলের শাহাবাজ টুরিজম, মেহেরপুরের ইসলাম স্টোর, গোপালগঞ্জের মেসার্স কাজী সৈয়াদ আলী, সিলেটের খাদিম সিরামিক লি., পারফেটি ভ্যান মেলে হাউজিং এস্টেট, হবিগঞ্জের মেসার্স আরএকে পেইন্টস্ (প্রা.) লি., মেসার্স আদি গোপাল মিষ্টান্ন ভা-ার, মেসার্স ডি এম ট্রেডার্স, মৌলভীবাজারের মেসার্স হিংগাজিয় প্লাইউড, মেসার্স হোটেল টি টাউন, সুনামগঞ্জের মেসার্স শাহ কবির লাইম, সুনামগঞ্জের লতিফা কমিউনিটি সেন্টার, মেসার্স আবুল লেইছ অ্যান্ড সন্স, রাজশাহীর সপুরা সিল্ক মিলস্ লি., রাজশাহী মিষ্টান্ন ভা-ার, ওমর আলী ও বগুড়ার আজাদ পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল।