গ্রুপ পর্ব:
১৫ জুন, রিও দে জেনেইরো, আর্জেন্টিনা ২ : ১ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা
বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর এই ম্যাচে আলো ছড়ান লিওনেল মেসি। দর্শনীয় এক গোল করে ব্যবধান ২-০ করার পাশাপাশি বিশ্বকাপের মঞ্চে দীর্ঘ সময়ের গোল খরা কাটান টানা চারবারের এই বর্ষসেরা তারকা।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডের মাথায় লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক থেকে মার্কোস রোহোর হেড জিয়াদ কোলাসিনাচের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে বল জালে জড়ায়।
৬৫তম মিনিটে মেসির জাদুকরী স্পর্শে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। হিগুয়াইনের সঙ্গে বল দেয়া নেয়া করে ডি বক্সের ঠিক সামনে পৌঁছে প্রতিপক্ষের একজনকে কাটিয়ে এবং আরেকজনকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি।
এটা ছিল বিশ্বকাপে ৬২৩ মিনিট আর সময়ের হিসেবে আট বছর পর মেসির গোল। ম্যাচের হিসেবে তা ৭ ম্যাচ পর! এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ম্যাচ সেরা হন তিনি।
৮৪তম মিনিটে ভেদাদ ইবিসেভিচের গোলে ব্যবধান কমায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা।
২১ জুন, বেলো হরিজন্তে, আর্জেন্টিনা ১ : ০ ইরান
এই ম্যাচেও আর্জেন্টিনার ত্রাতা লিওনেল মেসি এবং সেরা খেলোয়াড়ও তিনি।
ইরান তাদের আগের ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে নেয়া রক্ষণাত্মক কৌশল এই ম্যাচেও ধরে রাখে। ফুটবল জাদুকর মেসিকে নব্বই সময় পর্যন্ত ঠেকিয়েও রাখে তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, যোগ করা সময়ে ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে বাঁ পায়ের ‘ট্রেডমার্ক’ শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফুটবল জাদুকর।
২৫ জুন, পোর্তো আলেগ্রে, আর্জেন্টিনা ৩ : ২ নাইজেরিয়া
টানা তৃতীয় ম্যাচেও আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি তার জাদুকরী খেলা দেখান। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন বার্সেলোনার এই তারকা।
মেসির গোলে ম্যাচে দুবার এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসি তার দ্বিতীয় গোলটি করেন দারুণ এক ফ্রি কিক থেকে। এটা এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলও।
কিন্তু তার দুটি গোলই শোধ করে লড়াই জমিয়ে তোলার আভাস দেন নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড আহমেদ মুসা।
কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরার উল্লাস বেশিক্ষণ থাকেনি আফ্রিকার দলটির। তিন মিনিট পরেই মার্কোস রোহোর গোলে আবার এগিয়ে যায় দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। শেষ পর্যন্ত ওই ৩-২ ব্যবধানের জয়ে শতভাগ সাফল্য নিয়ে নকআউট পর্বে ওঠে আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয় রাউন্ড:
১ জুলাই, সাও পাওলো, আর্জেন্টিনা ১ : ০ সুইজারল্যান্ড
এই ম্যাচে গোল পাননি মেসি, তাতে কি? আনহেল দি মারিয়ার জয়সূচক গোলে অবদান রেখে ঠিকই হয়েছেন ম্যাচ সেরা। চার ম্যাচের চারটিতেই হলেন সেরা খেলোয়াড়।
নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময় শেষ হতে মাত্র তিন মিনিট বাকি। টাইব্রেকার ‘ভাগ্যপরীক্ষায়’ কি না হয়! তবে মেসি-দি মারিয়ার দারুণ বোঝাপড়ায় দলকে আর সে অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হয়নি।
সতীর্থ পালাসিওর পাস পেয়ে ট্রেডমার্ক দৌড়ে একজনকে কাটিয়ে একেবারে ডান দিকে ডি বক্সে দি মারিয়াকে দুর্দান্ত একটি পাস দেন মেসি। ডান দিক থেকে কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি দি মারিয়ার।
কোয়ার্টার-ফাইনাল
৫ জুলাই, ব্রাজিলিয়া, আর্জেন্টিনা ১ : ০ বেলজিয়াম
এই আসরে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার জয়ে ম্যাচ সেরা নন মেসি, বেলজিয়ামকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেরা খেলোয়াড় হলেন স্ট্রাইকার গনসালো হিগুয়াইন।
প্রথম চার ম্যাচে গোল করা দূরের কথা, একরকম নিষ্প্রভই ছিলেন হিগুয়াইন। তবে জ্বলে উঠলেন একেবারে মোক্ষম সময়ে। হাফভলি থেকে করা তার দারুণ গোলেই দুই যুগ পর সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা।
আনহেল দি মারিয়া বল বাড়িয়েছিলেন ডানে থাকা পাবলো সাবালেতার দিকে। কিন্তু বল বেলজিয়াম ডিফেন্ডার ইয়ান ভার্টনেনের পায়ে লেগে যায় হিগুয়াইনের কাছে। প্রথম ছোঁয়াতেই হিগুয়াইনের করা ডান পায়ের হাফভলি ফেরানোর কোনো সুযোগই ছিল না গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার।
অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি সময়টুকু নিজেদের রক্ষণ সামলে রেখে শেষ চাপে পৌঁছায় আর্জেন্টিনা।
সেমি-ফাইনাল
৯ জুলাই, সাও পাওলো, আর্জেন্টিনা ০ : ০ নেদারল্যান্ডস (টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা ৪-২ গোলে জয়ী)
শেষ চারের এই ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই রক্ষণাত্মক লড়াইয়ের সম্ভাবনা ছিল। ম্যাচেও তাই দেখা গেল। ফলে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য সমতার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
আগের ম্যাচে কোস্টা রিকাকে টাইব্রেকারে হারিয়ে এলেও এবার ব্যর্থ নেদারল্যান্ডস। গোলরক্ষক সের্হিও রোমেরোর বীরত্বে ৪-২ গোলের জয় পায় আর্জেন্টিনা। রুন ভ্লারের প্রথম শটটি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন রোমেরো। রবেনের পরের শটটি ঠেকাতে পারেননি কিন্তু স্নেইডারের তৃতীয় শটটি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন উজ্জ্বল করে তোলেন রোমেরো। আর আর্জেন্টিনার পক্ষে নেয়া ম্যাক্সি রদ্রিগেস চতুর্থ শটটি জালে জড়ালে দুই যুগ পর ফাইনালে ওঠে ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
গোলপোস্টের নিচে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়ে দলকে ফাইনালের পথ দেখানোয় ম্যাচ সেরা হন রোমেরো।