সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে চীনে লটারি-বাজি বেশ জমে উঠেছিল।জুন মাসে বিশ্বের বৃহত্তম এই ক্রীড়াযজ্ঞ চলাকালে দেশটিতে লটারি বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেড়েছিল।
আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ লটারি বিক্রি হয় দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলারের (বাংলাদেশের দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
ক্রীড়া লটারিসহ বিভিন্ন ধরনের লটারির মাধ্যমে চীন গত বছর চার হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে, যা বাংলাদেশের তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সমান। এটি ছিল ওই বছরে লটারি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়। প্রথম স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর আমেরিকা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক লটারি সমিতির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ওই বছর ছয় হাজার ৮০০ কোটি ডলারের লটারি বিক্রি হয়। গত বছর অবশ্য দেশটি লটারি বিক্রিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিল। চীনা অর্থ মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
চীনে জুয়াখেলা নিষিদ্ধ হলেও সরকারিভাবে কিন্তু এই লটারি পরিচালনা করা হয়, যা তাদের প্রচলিত রীতি-নীতির ব্যতিক্রম। রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ও সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশটি ১৯৯৪ সালে ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ লটারি চালু করে। দেশটিতে গত শতকের আশির দশকে সামাজিক খাতে ব্যয় তহবিল চালু করা হয়। তবে এ জন্য ব্যয় বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সে জন্য এই খাতে ব্যয় বাড়াতে লটারির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
বর্তমান চীনের স্থপতি ও কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার চেয়ারম্যান মাও সে তুং-এর আমলে জুয়া খেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
চীনা ক্রীড়ামোদীরাও অবশ্য আগ্রহ নিয়ে লটারিতে বাজি ধরে থাকেন। তাঁরা একটি নির্দিষ্ট ম্যাচ, রাউন্ড বা পর্ব ও অর্জিত পয়েন্টের আলোকে লটারিতে বাজি ধরার সুযোগ পান।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে লাইসেন্সধারী বা অনুমোদিত দুটি সামাজিক মিডিয়া তথা ওয়েবসাইটেও বৈধভাবে লটারির টিকিট বিক্রি করা হয়। সামাজিক মিডিয়া দুটি হলো উইচ্যাট ও ওয়েইবো। এতে বিক্রি বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন লটারি বিশেষজ্ঞরা।
তবে লটারি বিক্রি করে যে আয় হয় সেটির ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ল্যাং জিয়ানপিং সম্প্রতি গুয়াংডং টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা জানি না লটারি বিক্রির অর্থ কোথায় যায়। এমনকি যাঁরা লটারিতে বাজি ধরেন তাঁরাও কতটা অর্থ পান, সেটিও আমরা জানি না।’ সে জন্য তিনি সম্প্রতি দর্শকদের লটারির টিকিট না কেনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের লটারি-দুর্নীতি রুখতে হবে আমাদের।’
চীনের ১৩৫ কোটি মানুষের মধ্যে ২০ কোটি মানুষ নিয়মিতভাবে লটারির টিকিট কিনে থাকে।