সুবল চন্দ্র দাস কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ থেকে ঃ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত এ ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয়। তিন থেকে চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। গত ঈদুল ফিতরে ৩ লাখেরও বেশি মুসল্লি শোলাকিয়ায় একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির দাবি, ঈদুল ফিতরে এশিয়ার সবচেয়ে বড় জামাত শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে শোলাকিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে মনোরম পরিবেশে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের অবস্থান। এ মাঠের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নরসুন্দা নদী পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে। বর্তমানে ঈদগাহটির চারদিক অনুচ্চ প্রাচীরে ঘেরা। এক তথ্যে জানা যায়, এর মূল মাঠে ২৬৫টি কাতার হয়। প্রতি কাতারে নামাজির সংখ্যা হয় ৬০০ থেকে ৭০০। সেই হিসাব অনুযায়ী নামাজির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০। ঈদের জামাতে মুসল্লিরা মাঠ পেরিয়ে চারপাশের খালি জায়গা, জমি, ক্ষেত ও বসতবাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে যান। জানা গেছে, ইতিহাস প্রসিদ্ধ এ ঈদগাহের জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৬১ একর।
জানা যায়, ১৮২৮ সালে এ মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ওই বছরই স্থানীয় সাহেববাড়ির সৈয়দ আহম্মদের (র.) তালুক সম্পত্তিতে তারই ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এ মাঠের কলেবর বৃদ্ধি পায়। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর বংশধর।
এখানে প্রথম ঈদের জামাতের পর গত ঈদুল আজহার জামাত ছিল ১৮৬তম। এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ১৮৭তম জামাত। এ মাঠের মোতোয়ালি হিসেবে বংশানুক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ঈশা খাঁর বংশধর হয়বতনগর জমিদার পরিবার। এত বিশাল ঈদগাহ মাঠ, এত যার সুনাম, ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই ঈদগাহর জন্য কিশোরগঞ্জ আজ সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। লেখক ও গবেষক মু. আ. লতিফসহ অনেকের অভিযোগ, ঈদগাহের উন্নয়ন ও সংস্কারের প্রতি কেউ ততটা যতœবান নন। প্রতি বছর যেভাবে মাঠে মুসল্লির আগমন ঘটছে, তাতে মাঠের পরিধি বাড়ানোও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সম্পাদক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পাল জানান, মেলাটিও গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার হিসেবে আমাদের চলমান সংস্কৃতিকে ধারণ করছে।