প্রসঙ্গটা যখনই ওঠে, কেমন শূন্য দৃষ্টিতে তাকান। টেস্ট ক্রিকেট…আবার কি খেলা হবে কোনো দিন? মাশরাফি বিন মুর্তজার বুকের ভেতর খুব নিবু নিবু হয়েও সম্ভবত একটা আশার সলতে জ্বলছে। সে জন্যই এখনো বলে দেননি, ‘আর টেস্ট খেলব না।’ টেস্টে ফেরার প্রসঙ্গ উঠলে টানতে চান না কোনো উপসংহার। ‘দেখা যাক…’ জাতীয় কিছু একটা বলেই শেষ করে দেন আলোচনা।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, আর হয়তো টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা হচ্ছে না দেশের সেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজার। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেন্ট ভিনসেন্টের সেই অসমাপ্ত টেস্টটাই সম্ভবত হয়ে গেছে তাঁর শেষ টেস্ট। মাশরাফি নিজে টেস্ট থেকে এখনো অবসরের ঘোষণা না দিলেও সত্যি হতে চলেছে এটাই।
২০০৯ সালে ওই সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টেই বল করার সময় ভারসাম্য হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন উইকেটের ওপর। সেই চোটের জন্য আরও একবার হাঁটুতে চলে অস্ত্রোপচার, আরও একবার মাঠ থেকে ছিটকে যান মাশরাফি। বরাবরের মতো চোটাঘাতকে হারিয়ে আবার মাঠে ফিরলেও ফেরা হয়নি টেস্টে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩টা ওয়ানডে আর ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও খেলেননি কোনো টেস্ট।
টেস্টে ফেরা বা না-ফেরার সিদ্ধান্তটা একান্তই মাশরাফির নিজের হলেও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই মাশরাফির টেস্ট না খেলার পক্ষে। মাশরাফির টেস্ট খেলার চেয়ে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দলে তাঁর উপস্থিতিকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন প্রধান নির্বাচক, ‘মাশরাফির মতো ক্রিকেটারকে দলে খুবই প্রয়োজন। তরুণদের আদর্শ হিসেবে কাজ করতে পারে সে। দলকে প্রেরণা জোগায়, উদ্দীপ্ত রাখতে পারে। আমরা চাই চোটমুক্ত থেকে মাশরাফি যত বেশি দিন সম্ভব জাতীয় দলকে সার্ভিস দিক। টেস্ট খেলে সে যদি আবারও ইনজুরিতে পড়ে, তার সেই সার্ভিসটা আমরা পাব না।’ নিয়মিত পরিচর্যার মধ্যে রেখে মাশরাফির খেলোয়াড়ি জীবন দীর্ঘায়িত করারই পক্ষে তিনি, ‘আমি চাই মাশরাফি যত বেশি দিন সম্ভব খেলুক। টেস্ট খেলাটা এখনো অনেক বড় ঝুঁকির ব্যাপার রয়ে গেছে ওঁর জন্য।’
ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে টানা ৫-৬ ওভারের বেশি বল না করলেও চলে। কিন্তু টেস্টে সেটা সব সময় সম্ভব হয় না। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী এখানে একজন বোলারকে টানা বল করে যেতে হয়। মাশরাফির এখনো সে রকম বল করার ফিটনেস আসেনি বলেই টেস্ট থেকে দূরে থাকছেন, নির্বাচকেরাও চাইছেন মাশরাফি শুধু ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটই চালিয়ে যান। গত ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় লিগে চার দিনের একটা ম্যাচ খেললেও মাশরাফিকে টানা বল করানো হয়নি সেখানেও।
আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাই কেবল ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দলেরই সঙ্গী হবেন মাশরাফি। এবারও খেলা হবে না টেস্ট। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ তো কাল এটাও নিশ্চিত করে দিয়েছেন, অন্তত ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাশরাফির টেস্ট দলে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, ‘আমরা ২০১৫ বিশ্বকাপে সম্পূর্ণ সুস্থ মাশরাফিকে চাই। কাজেই তার আগে যে কয়টা টেস্ট আছে, মাশরাফির তাতে খেলার সম্ভাবনা নেই।’ আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি টেস্ট ছাড়াও অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিনটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।
মাশরাফি যদি টেস্ট খেলতেও চান, তাহলে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ২০০৯ থেকে ২০১৫—টেস্ট থেকে ছয় বছর দূরে সরে যাওয়া মাশরাফি কি তখন আর চাইবেন অনেকবার ছুরির নিচে যাওয়া হাঁটু জোড়ার ওপর আবারও টেস্ট ক্রিকেটের ভার দিতে?