রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও গেল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধন বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। ১৩০৮টি প্রকল্পে ৬৩৯ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪৯,৮৪২ কোটি টাকা। এ সময়ের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) নিবন্ধনের তথ্য এখন চূড়ান্ত করতে পারেনি বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই)। বিওআই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এফডিআই নিবন্ধন হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের মতো। সেই হিসেবে বছর শেষে এফডিআইর নিবন্ধন গত বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানান। বিওআইর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন অর্থবছরের মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। সে সময় ১ হাজার ৭৩৫টি প্রকল্পে ৬৬৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ নিবন্ধন ব্যাপক কমে যায়। ওই বছর এক হাজার ৪৫৭টি প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল মাত্র ৫৬০ কোটি ডলারের। সে তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের পরিস্থিতি অনেক ভাল। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিওআই’র এক সদস্য বলেন, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও সব ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগনীতি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। জমির সঙ্কট এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা না থাকলে এই হার দ্বিগুণ হতো। নিবন্ধের গড়ে ৭০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় বলে জানান তিনি। তবে নিবন্ধন মানেই প্রকৃত বিনিয়োগ নয়। উদ্যোক্তারা নিবন্ধন করলেও পরে নিজেদের সুবিধামতো সময়ে বিনিয়োগ করে থাকেন। সূত্র মতে, আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে সেবা খাতে। ৯২ প্রকল্পে ১৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বা ২০৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। বস্ত্র খাতে ৩৪২ প্রকল্পে ছিল ৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বা ১০৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব। কৃষি খাতে ১১৬ প্রকল্পে নিবন্ধনের পরিমাণ ৭ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বা ৯৬ কোটি ডলার। গত ২৪শে জুন জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ২০১৩ পঞ্জিকা বছরে বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ। পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬০ কেটি ডলার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত বেশি হারে প্রবৃদ্ধি এটাই প্রথম। দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআইর প্রবৃদ্ধি কমে আসার প্রবণতার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে এ অঞ্চলের মধ্যে হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগামী ৫ বছরে এফডিআই বেড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয় প্রতিবেদনে।