আরিফ উদ্দিন, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) থেকেঃ ‘আকাশে মাঝে মধ্যে মেঘ দেখা গেলেও, প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি হলেও যৎসামান্য। কিঞ্চিত পানি দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদে আরোও বেশী বিপাকে পড়েছেন। কারণ এ গরমে সামান্য বৃষ্টি পড়ার কারণে জমিতে গরম সৃষ্টি হয়ে রোপনকৃত চারা ব্যাপক ক্ষতিসাধনসহ আগাছা পরিস্কার করতে পারছেনা কৃষকেরা। উপরন্ত এলাকার পুকুর-ডোবা-জলাশয় গুলোতে পানি না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পাট জাগ দিতে পারছে না। গভীর-অগভীর ইঞ্জিন চালিত স্যালো মেশিন দিয়ে ভূক্তভোগীরা জমিতে পানি সেচ দিলেও তাতে কয়েকগুন বেশী খরচ পড়ছে বলে কৃষকেরা জানান। পলাশবাড়ী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় মোট ১২ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারণ করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৮ হাজার ৯’শ ২০ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন করা হয়েছে। বাকি জমি গুলোতে বৃষ্টির পানির অভাবে এখনও চারা রোপন করতে পারেনি কৃষকেরা। এর মধ্যে হাইব্রিড ৩’শ ৫০ হেক্টর, উফশি ৮ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৩’শ ২০ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানির অভাবে রোপনকৃত আমনের জমি ফেটে চৌঁচির হয়েছে। কৃষকেরা জানান, আমরা বৃষ্টির পানির অভাবে এখনও ৪০% জমিতে চারা রোপন করতে পারিনি। যাদের টাকা আছে তারা গভীর-অগভীর শ্যালো মেশিনের সাহায্যে চারা রোপন করছে। তাতে কয়েকগুন খরচ বেশী পড়ছে । এত টাকা দিয়ে আবাদ করতে আমাদের ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ধান কাটা-মাড়াই মৌসুমে ধানের দাম পাইনা, যা পাই তা দিয়ে ধার দেনা পরিশোধ করতে মহা বিপাকে পড়তে হয়। তাছাড়া ধান চাষাবাদ না করলে আমরা খাবো কি? অপরদিকে পানির অভাবে উৎপাদিত পাট জাগ দিতে পারছি না! একটি পুকুর বা ডোবা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি ভরাট করতে গেলে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা লাগে। এত টাকা দিয়ে একটি পুকুর বা ডোবা ভরিয়ে পাট জাগ দিয়ে লাভ তো দূরে থাক! পরিশ্রমের টাকা তোলাই দায়’। বরিশাল ইউনিয়নের কৃষক হামিদুল,হাবিবুল ইসলাম টিপু, বেতকাপা ইউনিয়নের কৃষক নুরুজ্জামান ও সদরের পাট চাষী ফজলু মিয়া জানান, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ছোট ছোট ছোট ডোবা-নদী-নালা এবং খাল-বিল রয়েছে। কিন্তু কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। সব ফেঁটে চৌঁচির। পানি থাকলে এলাকার মানুষ সেখানেই পাট জাগ দিতে পারত। কোথাও কোথাও একটু পানি থাকলেও সেখানে পাট জাগ দেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। আবার বারতি অসুবিধা হচ্ছে এলাকায় পাট ধোয়া শ্রমিক মিলছে না। যদিও মিলছে, তাদের পারিশ্রমিক অনেক। ওদের পারিশ্রমিক দিতে প্রান্তিক কৃষকরা হিমশিম অবস্থায় পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ শওকত ওসমান জানান, যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে তা দিয়ে জমি চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। আমরা কৃষকদের বলেছি বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে গভীর-অগভীর ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি নিয়ে আমন চারা রোপন করতে। কিন্তু অনেক কৃষকই ব্যয় বহুল হওয়ায় তা কুলে উঠতে পারছে না। সচেতন কৃষকদের ধারণা আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আদৌও পূরণ হবে কি না, এ নিয়ে অনেকটা সন্দিহান। ছবি সংযুক্ত