কটিয়াদী উপজেলার অনেক গ্রাম থেকে প্রতি রাতে গরু চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই চুরির হাত থেকে গরু রক্ষার জন্য শোবার ঘরে গরু ঠাঁই পেয়েছে সমকাল মনোবেদনা নিয়ে আবু হানিফা বলেন, ‘চোরের হাত থাইক্কা বাঁচতে প্রথমে গরুর শরীরে শিকল দিয়া তালা দিছি। তাও রক্ষা পায় নাই। এখন বসতঘরে রাখছি। জানি না শেষমেশ রক্ষা হইব কি-না!’ আবু হানিফার মতো একই কায়দায় গোয়ালের গরু বসতঘরে রেখে চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে চাইছেন উপজেলার পেমারচর, কাজিরচর, বৈরাগীরচর, চরআলগী ও রামদি গ্রামবাসী। গরু চুরি ঠেকাতে এসব এলাকায় রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পেমারচর ও কাজিরচর গিয়ে জানা গেছে, গত এক বছরে গ্রামগুলো থেকে অন্তত ১৫০টি গরু চুরি হয়েছে। রাত পোহালে তাদের প্রধান আলোচ্য গরু চুরি। আর ঘুমানোর আগে আতঙ্ক এটিই। গ্রামবাসী জানান, সম্প্রতি কাজিরচরের রতন মিয়ার একটি, সাইদুর রহমানের একটি, হাবিবুর রহমানের একটি, আবু হানিফার দুটি এবং হোসেন মিয়ার দুটি গরু চুরি হয়েছে। মাইন উদ্দিন ও মতির মিয়া গরু দুটি গোয়াল থেকে বের করলেও শেষে নিয়ে যেতে পারেনি। পেমারচর থেকে চুরি হয়েছে রমজান মিয়ার একটি, এনামুল হকের একটি, খোরশেদ মৌলভীর একটি, আলতু মিয়ার একটি, আ. আওয়ালের একটি, হোসেন মিয়ার একটি ও জ্যোৎস্না বেগমের একটি গরু। বৈরাগীরচর মধ্যপাড়ার থেকে বাচ্চু মিয়ার দুটি, আবু শামার দুটি ও কালাম মিয়ার একটি গরু চুরি হয়েছে। রামদি পূর্বপাড়ার এরফান ভূঁইয়ার গোয়াল থেকে এক রাতে পাঁচটি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। তাছাড়া একই গ্রামের তাহের উদ্দিনের একটি, সবুজ মিয়ার দুটি, তারা মিয়ার একটি ও ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু চুরি হয়েছে। চরআলগীর উত্তরপাড়ার লুৎফর রহমানের একটি, কাঞ্চন মিয়ার দুটি ও আলম মিয়ার একটি গরু চুরি হয়। পেমারচরের এনামুল হক জানান, তারা কৃষিজীবী। রাত পোহালে গরু ছাড়া চলে না। গরু চুরি হওয়া মানে সব চুরি হওয়া। একই গ্রামের আ. আওয়াল জানান, গ্রাম থেকে যখন গণহারে গরু চুরি হচ্ছিল, তখন তার গরুটি রক্ষা করতে গরুর শরীরে শিকল পেঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাও রক্ষা করতে পারেননি। শিকল কেটে তার গরু চোরে নিয়ে যায়। ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘গরু চুরি রোধে গ্রামবাসী এখন রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। পাহারায় থাকা লোকজন সামনে এগোলে পেছনের বাড়ি থেকে গরু চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশকে বলেও লাভ হচ্ছে না। এখন কোথায় গেলে, কার কাছে বললে প্রতিকার পাওয়া যাবে, বুঝতে পারছি না।’ গ্রামগুলোর চারপাশে আছে নরসিংদীর চরমান্দালিয়া ও খিদিরপুর ইউনিয়ন এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাড়িসাবর ইউনিয়নের আড়ালিয়া ও লেবুতলা গ্রাম। ওই সব অঞ্চলের কিছু অপরাধী স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে একাধিক গরু চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এক পাশে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ আর কটিয়াদী-গাজীপুর আঞ্চলিক সড়ক থাকার কারণে চুরির গরু সহজে গ্রাম ছাড়া করতে পারছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। কিছু গরু মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ঘটনাও আছে। প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে গরু চোর সিন্ডিকেট নিরাপদে অপরাধ করে গেলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে চাপা ক্ষোভের বিস্টেম্ফারণ ঘটে থাকে। দু’বছর আগে গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী একই জেলার পাকুন্দিয়ার সুতালড়ি গ্রামের দুলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গরু চুরির অপরাধে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। কিছুদিন আগেও এক চোরকে ধরে গণধোলাই দেন গ্রামবাসী। কটিয়াদী উপজেলা চেয়ারম্যান আ. ওয়াহাব আইনউদ্দিন বলেন, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলগুলো গরু চোরের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। কৃষকের গরু রক্ষা করতে হলে সম্মিলিত পুলিশি অভিযান করে তা নির্মূল করতে হবে। জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বলেন, গরু চুরির খবরটি জানতে পেরেছি। প্রতিকারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে কটিয়াদী থানা পুলিশকে তাগিদ দিয়েছি। ওসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।