দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ে তিন হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অর্জন—গেল অর্থবছরের এই সাফল্যের রেশ কাটতে না-কাটতেই চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয়ে কিছুটা ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। কারণ, এই সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাস বা গত জুলাইয়ে ২৯৮ কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে দেশীয় মুদ্রায়, যা ২৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার সমান। এই আয় আলোচ্য সময়ের ৩০৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ শতাংশ কম। একই সঙ্গে তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের রপ্তানি আয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। আর আলোচ্য সময়ে এই শিল্প খাতের ভালো প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় পুরো রপ্তানি আয়েই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জুলাইয়ে এই খাত থেকে ২৫১ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে ১২১ ও নিট পোশাক খাত থেকে এসেছে ১৩০ কোটি ডলার। পোশাক খাতের এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি। অবশ্য তার পরও মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ এসেছে এই পোশাকশিল্প থেকে। গত অর্থবছর এই শিল্প থেকে দুই হাজার ৪৪৯ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আমাদের ৮০ শতাংশ কারখানাই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছিল। তখন ক্রেতাদের কেউ কেউ কার্যাদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়াও একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইমেজ পুনরুদ্ধার ও ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তৈরি পোশাক কিছুটা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলেও পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া, টেরিটাওয়াল, প্রকৌশল পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প, আসবাবসহ কয়েকটি পণ্যে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এর মধ্যে ভালো খবর হচ্ছে, কার্পেটে ১৪৫, চামড়াজাত পণ্যে ৫৮ ও জুতায় ১৮ দশমিক ৭৪, রাসায়নিক পণ্যে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১০ কোটি, হিমায়িত খাদ্যে সাড়ে ছয় কোটি, পাট ও পাটজাত পণ্যে ছয় কোটি, কৃষিজাত পণ্যে চার কোটি ৯৪ লাখ, হোম টেক্সটাইলে পাঁচ কোটি ৯১, প্রকৌশল পণ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখ, বাইসাইকেলে এক কোটি এবং প্লাস্টিকে ৭৯ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়।
সরকার চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তিন হাজার ৩২০ কোটি ডলার। গত অর্থবছর এই আয় ছিল তিন হাজার ১৮ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশ। ফলে ভিত্তিটা বেশ ওপরে। তার পরও এবার সব পণ্যেরই রপ্তানি আয়ে কিছুটা তারতম্য ঘটেছে। তবে আরও কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ করার পরই রপ্তানি বৃদ্ধি বা হ্রাস বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে।