গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক গৃহবধুর লাশ রাস্তায় ফেলে রেখে শালিস বৈঠকে ওই গৃহবধুর জীবনের মূল্য ২ লক্ষ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার কলাবাড়ী বাজারে শালিস বৈঠকে স্থানীয় মাতবররা এ রায় প্রদান করেন।
ঘটনার বিবরনে জানাযায়- সাদুল্লাপুুর ইউনিয়নের টিকরীবাড়ী গ্রামের সুশীল ঢালীর ছেলে অজিত ঢালী (২০) ও কলাবাড়ী ইউনিয়নের কাফুলাবাড়ী গ্রামের ভদ্রকান্ত বৈরাগীর মেয়ে সমাপ্তি বৈরাগী (১৮)-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে উভয় পরিবারের লোকজন অজিত ঢালী ও সমাপ্তি বৈরাগীর মধ্যে সামাজিক ভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। দেড় বছর আগে সমাপ্তি বৈরাগী নববধু হয়ে স্বামীর ঘরে আসতে না-আসতেই তার স্বপ্ন চুড়মার হয়ে যায়।
যৌতুক লোভী স্বামী, শশুড় ও শাশুড়ী মিলে সমাপ্তির উপর শারিরীক নির্যাতন চালাতে থাকে। শত নির্যাতন সহ্য করেও সে গরীব বাবার কাছ থেকে যৌতুক এনে দিতে রাজি হয় নাই। সমাপ্তির বাবা মেয়ের শান্তির জন্য জামাইকে খুশি রাখতে মাঝেমধ্যে নগদ টাকা সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনে দিয়েও তাদের মন গলাতে পারে নাই। গত বৃহস্পতিবার হাঁসের বাচ্চাকে ভাত খাওয়ানো নিয়ে সমাপ্তি ও তার দাদী শাশুড়ী মনখুশি ঢালী (৭০) এর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাপ্তির স্বামী অজিত ঢালী, শশুড় সুশিল ঢালী, শাশুড়ী সুলতা ঢালী মিলে সমাপ্তিকে বেদম মারপিট করে। মারপিটের ঘটনায় সমাপ্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। এ ঘটনার পর সমাপ্তির স্বামী ও শশুড় তাকে কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করায় লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গত শুক্রবার ময়না তদন্Í শেষে গৃহবধু সমাপ্তির লাশ তার স্বামীর বাড়ীর পাশের রাস্তায় ফেলে রেখে উভয় পক্ষের লোকজন স্থানীয় মাতবরদের মধ্যস্থতায় শালিস বৈঠকে বসে। কলাবাড়ী, ইউপি সদস্য অধির বিশ্বাস ও শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস সহ স্থানীয় মাতবররা ওই গৃহবধুর জীবনের মূল্য ২ লক্ষ টাকা নির্ধারন করেছে। ভবিষ্যতে থানা পুলিশ বেকে বসতে পারে ভেবে ৫০ হাজার টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝার কাছে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টাকা পরিশোধ না হওয়ায় হত্যার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও ওই গৃহবধুর লাশ এখন পর্যন্ত দাফন করা হয় নাই। এ ব্যাপারে কলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান- আমি শালিশীতে উপস্থিত থাকতে পারি নাই। শালিশরা আমার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা জমা রাখার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, সমাপ্তির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে নিয়মিত মামলা হবে।